নয়াদিল্লি: স্বপ্ন দেখতে পারলে, তা করে দেখানোও অসম্ভব নয়। প্রবাদ সত্য প্রমাণিত হয় তাঁর হাতেই। মৃত্যু কেড়ে না নিলে, হয়ত আরও উচ্চতায় উঠতে পারতেন। কারণ ৬০ বছর পেরিয়ে ভারতকে স্বল্পভাড়ায় ‘আকাশ’-যাত্রার স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন তিনি। বয়স বরাবরই সংখ্যামাত্র হয়ে থেকেছে তাঁর কাছে। কিন্তু ৬২-তেই জীবন থেমে গেল দালাল স্ট্রিটের ‘বিগ বুল’ রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার (Rakesh Jhunjhunwala Death)।
শেয়ার মার্কেট নিয়ে আগ্রহ তৈরি করেন বাবাই
১৯৬০ সালের ৫ জুলাই রাজস্থানি পরিবারে জন্ম রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার। আদতে রাজস্থানের ঝুনঝুনুর বাসিন্দা তাঁর পরিবার। সেই সূত্রে পদবী ঝুনঝুনওয়ালায়। ছেলেবেলার বড় অংশ কেটেছে মুম্বইয়ে। বাবা ছিলেন ইনকাম ট্যাক্স কমিশনার। স্কুলের পাঠ শেষ করে অর্থনীতি নিয়ে মুম্বইয়ের সিডেনহ্যাম কলেজে ভর্তি হন রাকেশ। তার পর ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্স ইন্ডিয়া-তে পদার্পণ (Rakesh Jhunjhunwala Journey।
ছোটবেলায় বাবাকে বন্ধুদের সঙ্গে স্টক মার্কেট নিয়ে আলোচনা করতে শুনতেন প্রায়শই। সেই থেকেই স্টক মার্কেটের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় রাকেশের। বাবার কাছ থেকেই খুঁটিনাটি জানতে শুরু করেন। তবে বাবার টাকায় বিনিয়োগের রাস্তায় হাঁটেননি। বরং কলেজে থাকাকালীন অল্প অল্প করে শেয়ার কিনতে শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে প্রথম বার নিজের জমানো ৫ হাজার টাকা শেয়ার বাজারে ঢেলে দেন। ৪৩ টাকা দরে টাটা টি-র শেয়ার কেনেন। সেগুলি বিক্রি করেন ১৪৩ টাকা দরে। ফলে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এক বছরে 5 লক্ষ টাকার বেশি মুনাফা হয় তাঁর। ১৮৮৬ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে টাটার তাপবিদ্যুৎ সংস্থায় বিনিয়োগ করেন তিনি। পরে তাঁর কেনা সেই প্রত্যেক শেয়ারের দাম বেড়ে হয় ১২০০ টাকা করে। তাতে একধাক্কায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২০ লক্ষ থেকে বেড়ে ৫৫ লক্ষ হয় (Rakesh Jhunjhunwala Profile)।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবর টাটার মতো ব্লু চিপ সংস্থা প্রথম পছন্দ ছিল রাকেশের। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের সেই পছন্দে অবিচল ছিলেন তিনি। টাটা গ্রুপের টাইটানেই তাঁর সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ ছিল। ২০০২ থেকে ’০৩ সালের মধ্যে ৫ টাকা দরে ৮ কোটি টাকার বিনিময়ে টাটার শেয়ার কেনেন। বর্তমানে টাইটানের প্রতি শেয়ারের দাম ১৭৫১ টাকা। ২০১৭ সালে টাইটানের শেয়ার ঊর্ধ্বমুখী হলে একদিনে ৮৭৫ কোটি টাকা আয় করেন রাকেশ।
১৯৮৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাকেশ। স্ত্রী রেখা ঝুনঝুনওয়ালার সঙ্গে তিন সন্তান রয়েছে তাঁর। নিজের এবং স্ত্রীর নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে ‘রেয়ার এন্টারপ্রাইজ’ নামের প্রাইভেট ইক্যুইটি সংস্থা খোলেন। রেখাও বিনিয়োগ ব্যবসায় যুক্ত। এ বছর এপ্রিল মাসে মেট্রো ব্র্যান্ড এবং স্টার হেল্থ ইনস্যুরেন্স সংস্থা থেকে স্বামী-স্ত্রী মিলে ৮৩২ কোটি টাকা আয় করেন।
আরও পড়ুন: Rakesh Jhunjhunwala: ধনকুবের হয়েও করেছেন এই কাজ, ঝুনঝুনওয়ালা সম্পর্কে এই বিষযগুলি জানেন ?
দক্ষিণী খাবারের অনুরাগী ছিলেন রাকেশ। বিশেষ করে দোসা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় খাবার ছিল। সিনেমা দেখতেও অত্যন্ত ভালবাসতেন। অমিতাভ বচ্চন, ওয়াহিদা রহমান এবং আমির খান ছিলেন তাঁর প্রিয় শিল্পী। একাধিক ছবি প্রযোজনাও করেছেন।
এ ছাড়াও ‘হাঙ্গামা ডিজিটাল মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট’ এবং ‘অ্যাপটেক লিমিটেড’ সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন রাকেশ। একাধিক ভারতীয় সংস্থার ডিরেক্টর পদেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের আন্তর্জাতিক গতিবিধি সংক্রান্ত বিষয়ের উপদেষ্টাও ছিলেন। সম্প্রতি উড়ান ব্যবসায় পা রাখেন রাকেশ। গত ৭ অগাস্ট ‘আকাশ এয়ার’-এর শুভ উদ্বোধন হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য স্বল্পভাড়ায় বিমানযাত্রার ব্যবস্থা করাই লক্ষ্য ছিল তাঁর।
২০১৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ১৭৬ কোটি টাকার বিনিময়ে মুম্বইয়ের অভিজাত মালাবার হিল এলাকায় সমুদ্রের পাড়ে অবস্থিত একটি বহুতলের অর্ধেক কিনে নেন রাকেশ, যার মধ্যে ছ’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও শামিল ছিল। লোনাভালায় সাতটি শোওয়ার ঘর, জাকুজি, সুইমিং পুল, জিম এবং ডিস্কো নিয়ে তৈরি প্রাসাদোপম একটি হলিডে হোমও রয়েছে তাঁর।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্লু চিপ সংস্থাই ছিল পছন্দ
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাকেশের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৮০ কোটি ডলার ছিল। ২০২১ সালে দেশের ৩৬তম ধনী ব্যক্তি ছিলেন রাকেশ। ২০২২-এর বিশ্ব ধনী তালিকায় ৪৩৮ তম স্থানে জায়গা পান।