মুম্বই: বালাসাহেব ঠাকরের হাতে প্রতিষ্ঠা। তাঁর অবর্তমানে রাশ সামলেছেন নিজে। অথচ শিবসেনার উত্তরাধিকার হাতে রইল না উদ্ধব ঠাকরের। শিবসেনার তির-ধনুক প্রতীকচিহ্ন, নাম সব হারাতে হয়েছে তাঁকে। বরং তিনি দলের প্রধান থাকাকালীন, তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী একনাথ শিন্ডের হাতেই শিবসেনা নাম এবং প্রতীকচিহ্ন, সব তুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই এ বার মারাত্মক অভিযোগ তুললেন উদ্ধব শিবিরের নেতা সঞ্জয় রাউত। তাঁর দাবি, উদ্ধবের থেকে শিবসেনার নাম-প্রতীকচিহ্ন কেড়ে নিতে ২০০০ টাকার চুক্তি হয়। বিধিসম্মত ভাবে, আইনে পথে শিবসেনার নাম-প্রতীকচিহ্ন একনাথের হাতে ওঠেনি, বরং টাকার লেনদেন কে তিনি সেটি কিনে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সঞ্জয়।


রবিবার এই মারাত্মক অভিযোগ করেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে যে তথ্য হাতে পেয়েছি, সেই অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ২০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শিবসেনা নামটি এবং দলের তির-ধনুক প্রতীকচিহ্ন পেতেই ওই লেনদেন হয়। পুরোপুরি বাণিজ্যিক লেনদেন, যোগ্যতম বলে দখল যায়নি। পুরোপুরি ব্যবসা। টাকা দিয়ে শিবসেনার নাম-প্রতীকচিহ্ন কেনা হয়েছে।” সঞ্জয়ের দাবি, এখনও পর্যন্ত ২০০০ কোটি টাকার লেনদেনের হদিশ মিলেছে। এটি আসলে প্রাথমিক একটি হিসেব। ১০০ শতাংশ সঠিক তথ্য। শীঘ্রই আরও তথ্য সামনে আনা হবে। দেশের ইতিহাসে আগে কখনও এমন ঘটেনি বলে দাবি করেন সঞ্জয়।


বিজেপি-র সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক দশকের সমীকরণে ইতি টেনে উদ্ধবের শিবসেনা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে ‘মহা আঘাডি’ জোট গড়ে। তার আওতায় মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ধব। কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন একদা বিশ্বস্ত, তাঁর সরকারেরই মন্ত্রী একনাথ। একে একে শিবসেনা বিধায়কদের নিজের শিবিরে শামিল করেন তিনি। তার পর বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়েন একনাথ। অভিযোগ ওঠে, উদ্ধবকে সরিয়ে ক্ষমতার দখল পেতে আসলে পিছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি নাড়ার কাজ করে বিজেপি-ই। একনাথকে নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী করে সবকিছু তারাই পরিচালনা করছে।


কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি টানাপোড়েন। বরং উদ্ধবের শিবসেনা, আসল শিবসেনা নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক থাকায়, তিনিই আসল শিবসেনার প্রধান বলে দাবি করেন একনাথ। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হলে, সম্প্রতি একনাথের পক্ষেই সিদ্ধান্ত যায়। অর্থাৎ উদ্ধবের শিবির নয়, একনাথ শিবিরই আসল শিবসেনা, তির-ধনুক প্রতীকচিহ্নের দাবিদারও তারা বলেই জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। তাদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছেন উদ্ধব এবং তাঁর অনুগামীরা। সঞ্জয়ের কথায়, “সমর্থন কিনতে যেখানে ৫০ লক্ষ টাকা আলাদা রাখা হয়, সাংসদ কিনতে ১ কোটি এবং শাখা কিনতে ৫ কোটি, শিবসেনার নাম, প্রতীকচিহ্ন পেতে বিপুল টাকা আলাদা রাখা হয়েছিল নিশ্চিত ভাবেই। শিবসেনা বালাসাহেব ঠাকরে এবং উদ্ধব ঠাকরের দল। সেই দলের নাম-প্রতীকচিহ্ন চুরি করা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এর নেপথ্যে টাকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।”


যদিও সঞ্জয়ের এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ একনাথ শিবির। একনাথের অনুগামী বিধায়ক সদা সর্বঙ্কর বলেন, “সঞ্জয় রাউত কি কোষাধ্যক্ষ?” যদিও ঝাঁঝ কমাতে নারাজ সঞ্জয়। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৬৬ সালে শিবসেনার প্রতিষ্ঠা করেন বালাসাহেব। এতদিন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন উদ্ধব। তিনি বালাসাহেবের ছেলে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেও যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রশ্নের উদ্রেক করে বলে মত সঞ্জয়ের।