নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়নি তখনও। ৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্যে তখনও নিশ্চল বিজেপি নেতৃত্ব।  সেই সময়ই অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের সঙ্গে দলের নেতাদের দ্বন্দ্বের খবর সামনে আসছিল। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতের সাম্প্রতিক মন্তব্যে সেই জল্পনা আরও জোর পায়। 'সত্যিকারের সেবক কখনও অহঙ্কারী হয় না' বলে যে মন্তব্য করেছিলেন ভাগবত, সেই নিয়ে শুরু হয় কাটাছেঁড়া। সেই আবহে এবার সাফাই দিতে এগিয়ে এল RSS. তারা জানিয়েছে, বিশেষ কারও উদ্দেশে ওই মন্তব্য করেননি ভগবত। 


লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সম্প্রতি একটি সভায় ভাষণ দেন ভাগবত। সেখানে তিনি বলেন, "সত্যিকারের সেবক যিনি, যাঁকে আক্ষরিক অর্থে সেবক বলা যায়, তিনি মর্যাদা রক্ষা করে চলেন। মর্যাদা রক্ষা করে চলেন যাঁরা, তাঁরা কাজ করেন, কিন্তু সেই কাজের কৃতিত্ব নিতে নেমে পড়েন না।আমি করে দেখিয়েছি বলে কোনও অহঙ্কার থাকে না তাঁর মধ্যে। তাঁকেই প্রকৃত অর্থে সেবক বলা যায়।"


ভাগবতের এই মন্তব্য বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডাদের নিশানা করেই তিনি এমন মন্তব্য করছেন বলে দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালেন RSS নেতা ইন্দ্রেশ কুমার। অহঙ্কারের জন্যই এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৪০ পেরোতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। বৃহস্পতিবার জয়পুরের সভায় তিনি বলেন, "রামভক্তি দেখিয়েও অহঙ্কারী হয়ে ওঠে যে দল, তাদের ২৪০-এ আটকে যেতে হয়েছে।"


সেই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই RSS-এর তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, RSS এবং BJP-র মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। সত্যিকারের সেবক কখনও অহঙ্কারী হবেন  না বলে যে মন্তব্য করেছেন ভাগবত, তা আসলে দলের সাধারণ কর্মীদের জন্য। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরও একই বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপি নেতৃত্বকে নিশানা করে ওই মন্তব্য করেননি তিনি। শুধু শুধু এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। আর ইন্দ্রেশ যা বলেছেন, তা তাঁর ব্য়ক্তিগত মতামত বলে জানিয়েছে RSS.


তবে বিষয়টি মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই RSS এবং BJP-র মধ্যে সুরতাল মিলছিল না বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার একটি মন্তব্য এই জল্পনায় ইন্ধন জোগায়। নাড্ডার বক্তব্য ছিল, "গোড়ার দিকে আমরা এতটা সফল ছিলাম না, দলে হিসেবেও অনেক ছোট ছিলাম, তাই RSS-কে প্রয়োজন ছিল। এখন আমরা সংখ্যায় বেড়েছি, যথেষ্ট সক্ষম হয়েছি। বিজেপি নিজেই নিজেকে চালায়।"


RSS-এর নেতারাও হাতগুটিয়ে বসে থাকেননি। সঙ্ঘের মুখপত্র 'অর্গানাইজার'-এ অজিত পওয়ারকে জোটে শামিল করার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়। যে বা যাঁরা এই ধরনের উপদেশ দিচ্ছেন, তাতে ভুল হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়। এ বছর ৩১ অগাস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত RSS-এর কার্যনির্বাহী বৈঠক রয়েছে। সেখানে পারস্পরিক সমীকরণের প্রসঙ্গটিও আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে খবর।