নয়াদিল্লি: ভোটের ময়দানে ভাষণ দেওয়া হোক বা শাসক-বিরোধী তরজা, কথায় কথায় অপশব্দ ফুলঝুরি ফোটে রাজনীতিকদের মুখে। আচরণ বিধির দোহাই দিয়েও মুখে লাগাম পরানো যায় না কাউকে। তবে সংসদ ভবনে অন্তত যাতে মুখে লাগাম থাকে, তার ব্যবস্থা করল সরকার। তাই লোকসভা এবং রাজ্যসভার জন্য চালু হল ভাষাবিধি (Unparliamentary Words)। বেশ কিছু শব্দের গায়ে বসল 'অসংসদীয়' তকমা। অর্থাৎ সংসদ ভবন চত্বরে সেগুলির প্রয়োগ করতে পারবেন না জনপ্রতিনিধিরা (Indian Parliament)। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতেই এি পদক্ষেপ বলে অভিযোগ উঠছে।


সংসদের নয়া ভাষাবিধি!


আগামী ১৮ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে (Monsoon Session)। তার আগে ভাষাবিধি চালিু করা হয়েছে। কোন কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে লজ্জাবোধ, অত্যাচারিত, বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্নীতিগ্রস্ত, নৈরাজ্যবাদী, স্বৈরাচারী, শকুনি, তানাশাহ (শাসকের দ্বারা তৈরি ভয়ের পরিবেশ), জয়চন্দ, জুমলাজীবী, বিনাশ পুরুষ, খুন সে খেতির (রক্তের খেলা) মতো শব্দ এবং শব্দবন্ধ ব্যবহারে লাগাম টানা হয়েছে। তর্ক-বিতর্ক চলাকালীন কোনও সাংসদ যদি ওই শব্দ উচ্চারণও করে থাকেন, সংসদের লিখিত রেকর্ড থেকে সেগুলি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে লোকসভার সচিবালয় (Parliament Language)। 


সংসদের রেকর্ডে রাখার অযোগ্য শব্দ হিসেবে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে রয়েছে, দোহরা চরিত্র (দু'মুখো), নিকম্মা (নিষ্কর্মা), নৌটঙ্কি (নাটুকে), ঢিঁঢোরা পিটনা (ঢাক পেটানো), বেহরি সরকার (শ্রবণশক্তিহীন সরকার)-এর মতো শব্দ এবং শব্দবন্ধও রয়েছে। ২০২১ সালে দেশের লোকসভা, রাজ্যসভা, রাজ্যের বিধানসভাগুলিতে এবং ২০২০ সালে কমওয়েলথ দেশগুলিতে ব্যবহারের অযোগ্য বলে ঘোষিত শব্দগুলিকেও অসংসদীয় শব্দ এবং শব্দবন্ধের তালিকায় রাখা হয়েছে। সময় বিশেষে মাঝেমধ্যেই এই ধরনের অসংসদীয় ভাষার তালিকা তৈরি হয় বলে জানানো হয়েছে। কোনও বিশেষ আবেগ বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দকে জুড়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন মনে হলে সে ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যেতে পারে।



এ নিয়ে কেন্দ্রকে একহাত নিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, 'নতুন ভারতের নতুন অভিধান।' ব্যাঙ্গাত্মক একটি পোস্ট করে রাহুলের বার্তা, 'অসংসদীয় একটি বিশেষণ। আলোচনা-তর্কে প্রধামন্ত্রীর সরকার পরিচালনা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত শব্দ এখন নিষিদ্ধ।'



এ নিয়ে কেন্দ্রকে একহাত নেন তৃমমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, 'অযোগ্য সরকার, কপট আচরণের জন্য যাদের লজ্জাবোধ করা উচিত, মানুষের সঙ্গে তারা কী ভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, লোকসভায় দাঁড়িয়ে তা বলতে পারব না আমি?' মহুয়ার কথায়, 'লোকসভা এবং রাজ্যসভার ভাষাবিধিতে সঙ্ঘী শব্দটি নেই। অর্থাৎ বিজেপি দেশকে ধ্বংস করছে বোঝাতে যে যে শব্দ ব্যবহার করতে পারেন বিরোধীরা, সেই সব শব্দগুলিকেই নিষিদ্ধ করার ভাবনা।'


কমনওয়েলথ দেশগুলিতে Baloney, batshit crazy, bloody, Covid spreader, gropers, paedophiles, shit-এর মতো একগুচ্ছ ইংরেজি শব্দের সংসদে ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে ভারতে সংসদে ব্যবহারের অযোগ্য শব্দের তালিকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্।সভার চেয়ারম্যান এবং লোকসভার স্পিকার। 


আরও পড়ুন: Draupadi Murmu: জনজাতি মানুষের নন, অসৎ ভাবনার প্রতিনিধি দ্রৌপদী, মত কংগ্রেস নেতার



বিরোধী কণ্ঠরোধের অভিযোগ


সংসদের সচিবালয় থেকে যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে গদ্দার, গিরগিটি, কুম্ভীরাশ্রু, অপমান, অসত্য, অহঙ্কার, কালো দিন, কালোবাজারি, খরিদ ফরোক্ত, দাঙ্গা, দালাল, দাদাগিরি, চামচা, চামচাগিরি, চেলা, রক্তপাত, রক্তাপ্ত, প্রতারণা, শিশুসুলভের মতো শব্দকেও ব্যবহারের অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দি, ইংরেজি, দুই ভাষা মিলিয়ে শব্দগুলির উল্লেখ রয়েছে। ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে disgrace, donkey, drama, eyewash, fudge, hooliganism, hypocrisy, incompetent, mislead, lie and untrue-ও ব্যবহারের অনুপযোগী শব্দ বলে বিবেচিত হয়েছে।