ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, ভুবনেশ্বর: সারি সারি মৃতদেহ রাখার জায়গাই নেই ভুবনেশ্বর এইমসের মর্গে। পারাদ্বীপ বন্দর থেকে আনা হল জাহাজের রেফ্রিজারেটেড কন্টেনার। এই ৩ টি কন্টেনারেই সংরক্ষণ করে রাখা হবে বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের অশনাক্ত দেহ।
এই মুহূর্তে ভুবনেশ্বর এইমস যেন মৃত্যুর জগতই। একের পর এক ক্ষতবিক্ষত দেহ। কারও মুখ কোনওমতে চিনতে পারছে পরিবার... কারও চেহারা চেনার অবস্থাতেও নেই! ভুবনেশ্বর এইমসের মর্গে এখন কার্যত মৃতদেহের ভিড়। কিন্তুর রাখার জায়গার অভাব।
এই পরিস্থিতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণ করতে হাসপাতালে আনা হল জাহাজের রেফ্রিজারেটেড কন্টেনার। মাইনাস ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই কন্টেনারগুলিতে সংরক্ষণ করে রাখা যায় মৃতদেহ
ডিএনএ পরীক্ষা করার পরই অশনাক্ত দেহগুলি তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে। তাই এখনও বেশ কিছুদিন ভুবনেশ্বর এইমসেই সংরক্ষণ করে রাখা থাকবে দেহগুলি। ভুবনেশ্বর এইমসের মর্গে রাখা যায় ৩০ টি দেহ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে রাখা ছিল ১২৩ টি মৃতদেহ এরপর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৬৬ টি দেহ বাকি দেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছে ভুবনেশ্বর এইমস কর্তৃপক্ষ
ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুজিত সাহু-র কথায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুয়ায়ী এভাবে দেহ রাখা যায়। জায়গার অভাবে এইমসের মৃত রোগীদের দেহ রাখা যাচ্ছিল না মর্গে। ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের অশনাক্ত দেহ রাখার জন্য তাই পারাদ্বীপ বন্দর থেকে আনা হয়েছে রেফ্রিজারেটেড কন্টেনার।
কেউ বোনের বিয়ে উপলক্ষ্য়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কারও ওপর আবার গোটা সংসারের দায়িত্ব। একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একাধিক পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে। দুর্ঘটনায় মৃত্য়ু হয়েছে পুরুলিয়ার বাসিন্দা ২ ভাইয়ের। বাড়িতে মা-বাবা, দুই ভাইয়ের স্ত্রী, সন্তান। কীকরে চলবে সংসার? অকুল পাথারে পরিবার।
১২ জুন বোনের বিয়ে তাই বাড়ি ফিরছিলেন দাদা। ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনা কেড়ে নিল মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপুলতলা গ্রামের বাসিন্দা, ২৩ বছরের কৃষ্ণ রবিদাসকে। সন্তানকে রক্ষা করতে পারলেননা কৃষ্ণর মা, যশোদা রবিদাস। পরিবার সূত্রে খবর, ভিনরাজ্য়ে পাইপলাইনের কাজ করতেন কৃষ্ণ। যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন বাড়ি।
শুক্রবার টিভিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই ছেলের খোঁজ করতে শুরু করে পরিবার। বালেশ্বরে ছুটে যান আত্মীয়-স্বজনরা। সোমবার, ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে মর্গে পোশাক আর পকেটে থাকা আধার কার্ড দেখে ভাইয়ের মুণ্ডহীন দেহ শনাক্ত করেন দাদা। বাড়িতে বিয়ের আনন্দ মুহূর্তে বদলে গেছে বিষাদে। শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।
দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর ছেলেকে। মনিটরে দেখানো মৃতদেহের মধ্য়ে, ছেলের মুখটাও তিনি দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি। কিন্তু ফেরত পাচ্ছেন না ছেলের মৃতদেহ। কারণ, সেটি বিহারের এক পরিবার নিয়ে চলে গেছে। চরম সমস্য়ায় পড়েছেন সন্তান হারা বাবা। এদিকে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখ থেকে নিজে বেঁচে ফিরলেও, ভাইয়ের খোঁজ পাচ্ছেন না ভগবানপুরের বাসিন্দা এক ব্য়ক্তি।