কলকাতা : করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্বের জনজীবন। চলতি বছরে আবার আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনও যায়নি। তার মধ্যেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, তৃতীয় ঢেউ নিয়ে। কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ঠিক কতটা ভয়ঙ্ক হতে চলেছে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আমাদের দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে চলতি অগাস্ট মাস থেকেই। আর তা সবথেকে ভয়ঙ্কর রূপ নেবে আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ। সেইজন্য তাঁরা দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। সচেতন করছেন। আর সবথেকে বেশি জোর দিচ্ছেন টিকাকরণের উপর। গবেষকদের মতে, করোনার তৃতীয় ঢেউ যখন সবথেকে শক্তিশালী রূপ নেবে তখন দেশে প্রতিদিন গড়ে এক লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হবেন। তাঁদের দাবি, সংখ্যাটা প্রতিদিন প্রায় দেড় লক্ষ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। হায়দরাবাদ এবং কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির দুই গবেষক মাথুকুমালি বিদ্যাসাগর এবং মন্দিরা আগরওয়াল জানাচ্ছেন এমনটাই। তবে, এখনই মারাত্মক ভয় পাওয়ার কারণ নেই না বললেও, অনেকে এর মধ্যে খানিকটা ইতিবাচক দিকও দেখছেন। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, গত বছর ৭ মে নাগাদ আমাদের দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৪ লক্ষেরও বেশি। সেখানে করোনার তৃতীয় টেউতে রোজ সংক্রমিত হতে পারেন এক থেকে দেড় লক্ষ মানুষ। সেদিক থেকে দেখলে কিন্তু গত বছরের থেকে অনেক কম মানুষ সংক্রমিত হবেন।
তাঁদের দাবি, তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের হার রোখা এত সহজ নয়। কারণ, প্রথমবারের মতো মানুষ আর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বসে নেই। প্রত্যেকেই নিজের নিজের কাজে যোগ দিয়েছেন। যার ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, করোনার তৃতীয় ঢেউ এ দেশে আছড়ে পড়লে কোন রাজ্য হতে পারে হট স্পট? বিশেষজ্ঞদের দাবি কেরল। তাঁদের যুক্তি, এখন দেশে যে সংখ্যক মানুষের দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছে, তার অর্ধেক ক্ষেত্রেই কিন্তু রোগী কেরলের বাসিন্দা। কেরলের পাশাপাশি তাঁরা উদ্বিগ্ন নর্থ ইস্টের রাজ্যগুলি নিয়েও। সেখানেও কিন্তু করোনার প্রকোপ ছড়াচ্ছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পল কুট্টুমান বলেছেন, 'কোনও একটি বা দুটো জায়গায় যদি হঠাৎ করে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলেই দেশের নিরিখে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আরও বেশি করে মানুষ করোনায় সংক্রমিত হবে। আমরা আশা করছি, তৃতীয় ঢেউয়ে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়বে। না হলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গেলে, সামলানো মুশকিল হয়ে পড়বে। এর থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানোর একটাই উপায়। সকলের টিকাকরণ।'
একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশের মাত্র ৭.৬ শতাংশ মানুষই এখনও পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন। অতএব, প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ এখনও টিকা পাননি বা নেননি। অথচ, শিয়রে করোনার তৃতীয় ওয়েভ। এই অবস্থায় ভারতে অগাস্ট, সেপ্টেম্বর এবং সর্বোপরি অক্টোবর মাসে কী অবস্থা হবে, সেটাই দেখার।