আগরতলা: নৈশ কার্ফু ভাঙায় গত সপ্তাহে দুটি বিয়েবাড়িতে অভিযান করার জেরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক শৈলেশ কুমার যাদবকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।
ত্রিপুরার আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং সেজন্য কমিটিও গঠন হয়েছে, তাই রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি লিখে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান শৈলেশ।
ওই চিঠিতে শৈলেশ জানান, তদন্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ও ঘটনার তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তাই তাঁকে যেন জেলাশাসকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। রতনলাল জানান, শৈলেশের ওই আবেদন গ্রহণ করে তাঁকে সরিয়ে দেন মুখ্যসচিব।
গত ২৬ এপ্রিল শহরের মাণিক্য কোট এবং গোলাপ বাগানে অভিযান চালায় পুলিশ। নেতৃত্বে ছিলেন ওই জেলাশাসক। দুটি বিয়েবাড়িতে পুলিশ-সহ উপস্থিত হন এই আইএএস অফিসার।
যেখানে দেখা যায় বিয়ে বাড়িতে ঢুকে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কেন নৈশ কার্ফু না মেনে বিয়েবাড়ি আয়োজন করা হয়েছে? রীতিমতো ধমকান ওই জেলাশাসক। বিয়েবাড়িরই এক সদস্য বোঝানোর চেষ্টা করেন অনুমতিপত্র রয়েছে তাঁদের কাছে।
এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-সহ পুরোহিতকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন ওই জেলাশাসক। শুধু তাই নয়, পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি-কে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিয়েবাড়িতে উপস্থিত এক মহিলা জেলাশাসককে অনুমতিপত্র দেখাতে এলে তিনি ওই কাগজ ছিড়ে ফেলেন। ওই মহিলা বলেন, স্যর এই অনুমতি পত্রটা দেখুন। সঙ্গে সঙ্গে মহিলার হাত থেকে কাগজ নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, অনুমতিটা বিয়ের জন্য, কিন্তু রাত ১০টার পর বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য নয়।
অন্য আরেকটি বিয়েবাড়িতে গিয়েও আমন্ত্রিত-সহ বাড়ির লোকজনকে বের করে দেন ওই জেলাশাসক। বিয়েবাড়ির আলো বন্ধ করে দিতেও দেখা যায়। হঠাৎ কেন বিয়েবাড়িতে পুলিশ, তা দেখে হকচকিয়ে যান অনেকেই। শুধু তাই নয়, বিয়েবাড়িতে বরকে ঘাড় ধাক্কাও দেন শৈলেশ কুমার যাদব।
ঘটনার ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টে ভরিয়ে দেন নেটিজেনরা ৷ আগরতলার জেলাশাসকের অভিযান ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। এত বাড়াবাড়ি কেন? প্রশ্ন তুলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের।
সমালোচনার মুখে শেষপর্যন্ত ক্ষমাও চেয়ে নেন জেলাশাসক শৈলেশ কুমার যাদব। বলেন, ‘‘ আমার এই আচরণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত ৷ আমি এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ৷
কিন্তু, প্রবল সমালোচনার মুখে তদন্ত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনও করা হয়। এখন সেই কারণে, তাঁকে দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে দেওয়া হল।