লখনউ:  উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)।  রাজ্যের ৪০৩ আসনের মধ্যে বিএসপি পেয়েছে মাত্র একটি আসন। অথচ ২০০৭-এ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছিল মায়াবতীর দল। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে সেভাবে দলের হয়ে প্রচারে দেখা যায়নি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। শেষবেলায় কিছু জনসভা করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার সংখ্যা বেশ কম। দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে ভোটের প্রচারে মায়াবতীর প্রায় আড়ালে থাকার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। ভোটের ফলেও দেখা গেল বিএসপি কোনও লড়াইয়েই ছিল না। এবারের লড়াই হয়ে উঠেছিল কার্যত বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির দ্বিমুখী লড়াই।  ভোটের ফল প্রকাশের পর মায়াবতী সমাজবাদী পার্টিকে কটাক্ষ করলেন। তিনি বলেছেন, সমাজবাদী পার্টির ‘জঙ্গলের রাজত্বে’র প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কায় এমনকি দলিতরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। 


মায়াবতী বলেছেন, বিএসপি সমর্থকরা মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দু ও বিভিন্ন অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়। তাঁদের মনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল যে, সমাজবাদী পার্টি ক্ষমতায় ফিরলে রাজ্যে ফের অতীতের জঙ্গলরাজ ও গুণ্ডারাজ ফিরে আসবে। এই জন্যই তাঁরা সমাজবাদী পার্টিকে রুখতে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। 


মায়াবতী আরও বলেছেন, সংখ্যালঘু ভোট এক তরফা পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি। এরফলে বিএসপির আসন সংখ্যা এত কমে গিয়েছে। বিএসপি নেত্রী বলেছেন, বিজেপিকে হারাতে সংখ্যালঘুরা সমাজবাদী পার্টির ওপর আস্থা রেখেছিল। এর মূল্য আমাদের চোকাতে হয়েছে। 
তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘুরা সমাজবাদী পার্টিকে ভোট দেওয়ায় পাল্টা মেরুকরণ ঘটেছে। বিএসপি-র মূল জনভিত্তি দলিত ও ওবিসি-দের একটা বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। 


মায়াবতী বলেছেন, এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে নিজেদের প্রয়োজন অনুয়ায়ী পরিবর্তন করবে বিএসপি। 


মায়াবতীর দাবি, সংখ্যালঘুরা বিএসপি ভোট দিলে বিজেপিকে হারানো যেত। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘু ও দলিতদের ভোট এক হলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল যা করতে পেরেছে, এখানেও তা হতে পারত। প্রত্যাশামাফিক ত্রিমুখী লড়াই হলে বিএসপি-র ফল ভিন্ন হত এবং বিজেপিকে রোখা সম্ভব হত। 
মায়াবতী আরও অভিযোগ করেছেন, বিজেপি আগ্রাসী মুসলিম-বিরোধী প্রচার চালিয়েছে এবং এরফলে বিভ্রান্তিকর একটি ভাষ্য গড়ে উঠেছিল। তিনি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন। মায়াবতীর অভিযোগ, সংবাদমাধ্যম মনগড়া সমীক্ষা দেখিয়েছে। আর তা মানুষদের, বিশেষ করে, সংখ্যালঘুদের বিভ্রান্ত করে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। বিএসপি-কে বিজেপি-র বি-টিম বলে একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্তিতি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। 


মায়াবতী দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রদর্শন করে বলেছেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।