নয়াদিল্লি: বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানো, সন্ত্রাসী কাজকর্মে অর্থের জোগানে কোপ এবং সর্বোপরি ভারতকে ডিজিটাল নির্ভর করে তোলাই লক্ষ্য বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার (Demonetisation Anniversary)। সেই মতো, ছ'বছর আগে, ২০১৬-র ৮ নভেম্বর মধ্যরাতেই নোটবন্দির ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কিন্তু নোটবন্দির ছ'বছর পরও, দেশের অর্থনীতিকে নগদমুক্ত করা তো দূর, অভ্যন্তরীণ বাজারে মানুষের হাতে থাকা নগদ আগের চেয়ে বেড়েছে বই কমেনি। 


নোটবন্দির পরও মানুষের হাতে থাকা নগদে রেকর্ড বৃদ্ধি


কিন্তু গত শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India) প্রকাশিত হিসেব বলছে, ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, দেশে মানুষের হাতে থাকা নগদ বেড়ে ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৬-র  ৪ নভেম্বর  ভারতের বাজারে মানুষের হাতে থাকা নগদের পরিমাণ ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৬-র নভেম্বরের তুলনায় এই মুহূর্তে দেশের মানুষের হাতে নগদ ৭১.৮৪ শতাংশ বেশি বলে জানা গিয়েছে (RBI)।


নগদ বলতে ছাপানো নোট এবং কয়েনকে ধরা হয়েছে, যা জিনিপত্র কেনাবেচা, ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ব্যাঙ্কগুলিতে মজুত নগদ এবং বাজারে থাকা মোট নগদকে বিয়োগ করলে মানুষের হাতে যা থাকে, সেই নিরিখেই  এই হিসেব উঠে এসেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ভারতীয় অর্থনীতিতে নগদের ব্যবহার বেড়েছে বই কমেনি। অনলাইন লেনদেন এখনও বিকল্প হয়েই রয়েছে।


২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আগাম ঘোষণা ছাড়াই নোটবন্দির কথা দেশবাসীকে জানান মোদি। রাত ৮টা নাগাত ঘোষণা করেন মোদি, আর ওই দিনই মধ্য রাত থেকে বাতিল করা হয় পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। কালো টাকা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস রুখতে এবং দেশকে ডিজিটাল নির্ভর করে তুলতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়। 



আরও পড়ুন: Lal Krishna Advani Birthday: বাড়িতে গিয়ে আডবানিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা মোদির, স্মরণ করালেন অবদান


কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন বিরোধীরা। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা বলেন। যদিও বরাবরই নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে কেন্দ্র। তাই নোটবন্দির ছ'বছর পূর্তিতে ফের কেন্দ্রের সমালোচনা করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার ট্যুইটারে তিনি হিন্দিতে লেখেন, 'কালো টাকা এল না, শুধু দারিদ্র্য এল, অর্থনীতি নগদমুক্ত হল না, দুব্রল হল না সন্ত্রাসী শক্তি, কোটি কোটি ছোট ব্য়বসা, রোজগার বন্ধ হয়েছে, 'রাজা' ৫০ দিনের কথা বলে অর্থনীতিকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন'। 


এর পাল্টা, বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ট্যুইটারে লেখেন, ‘বিজেপি-র আমলে কালো টাকা ফেরত সেছে। দারিদ্র্য দ্রুত হারে কমেছে। দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এখন। কোটি কোটি ছোট ব্যবসা উঠে এসেছে, বেড়েছে রোজগার। নোটবন্দির মাধ্যমে কালো টাকার উপর যে আঘাত হানা হয়েছে, তাতে অনেকের রাগ হয়েছে বুঝতে পারছি। কষ্ট ফুটে উঠছে’।


নোটবন্দির ফলাফল নিয়ে তুঙ্গে তরজা


তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেই বলছে, মানুষের হাতে নগদ বেড়েছে। এর আগে, ২০২১ সালের ৮ অক্টোবরে যে হিসেব পাওয়া গিয়েছিল, সেই অনুযায়ী, মানুষের হাতে নগদ ছিল ২৮.৩০ লক্ষ কোটি টাকা।২০১৭-২০১৮ অর্থবর্ষে বাজারে নগদের জোগান যেখানে ১০.৭ শতাংশ ছিল, ২০২০-২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ১৪.৪ শতাংশ।