কলকাতা: বোলপুরের শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। এবার তার রেশ এসে পড়ল কলকাতার রাজপথে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়িয়ে রবিবার পথে নামলেন বিদ্বজ্জনরা। এদিন অ্যাকাডেমির সামনে প্রতিবাদ জানাতে সামিল হন তাঁরা। ওই প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুও।


জৈব প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, অনুরাগ, নাসিরুদ্দিনদের মতো লোকরা যখনই বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তখনই তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও ষড়যন্ত্র করেছে। অর্মত্যর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তর্ক নয়, কথা নয়, বিরোধী স্বর তোলা যাবে না। স্পষ্টতই, অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি বিতর্কের জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছেন তাঁরা।

বিদ্বজ্জনদের পথে নামা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, অমর্ত্য সেনকে নিয়ে নয়। টিএমসি বাঁচাও অভিযান চলছে। যখন টিএমসি ঝামেলায় পড়ে তখন শিল্পীদের আঁকড়ে ধরে। আমার মনে হয় যে জাহাজটা ডুবে যাচ্ছে শিল্পীরা যেন সেদিকে না যান। বুদ্ধিজীবীরা যেন সেদিকে না যান। তাহলে তাঁদেরও একইসঙ্গে ডুবতে হবে।

১৯৩৩-এর ৩ নভেম্বর শান্তিনিকেতনেই জম্মগ্রহণ করেছিলেন অমর্ত্য সেন। তাঁর নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অমর্ত্য সেনের দাদু ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন কবিগুরুর সহযোগী। পরবর্তীকালে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। সম্প্রতি একটি মহল থেকে দাবি করা হয়, অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচী-র কিছুটা অংশ বিশ্বভারতীর এক্তিয়ারভুক্ত। এই নিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে চিঠিও লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে, এত বছর পর তাঁর বাড়ি নিয়ে কেন বিতর্ক, সেই প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্মত্য সেনও। বাঙালির গর্ব, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বাড়ি নিয়ে বিতর্কের প্রতিবাদে এদিন কলকাতায় বাংলা অ্যাকাডেমির সামনে প্রতিবাদ সভা করেন বিশিষ্টজনরা।

এবিষয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ  অমর্ত্য সেন আগেই বলেছিলেন, ৫০ বছর বাদে বলা হচ্ছে বাড়িটায় কিছু গন্ডগোল আছে। কী করে আবিষ্কার করলেন? প্রমাণ কী? আপনাদের কী কাগজ আছে? অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে, বিজেপিকেও আক্রমণ সানিয়েছে অনেকে। পাল্টা বিদ্বজ্জনদের কটাক্ষ করছে বিজেপি। দিলীপ ঘোষ বলেন, একবার সিপিএমের সময় ডুবেছিলেন কোনমতে ডাঙ্গায় উঠেছেন দিদির আঁচল তলে। ওই ভুল যেন না করেন টিএমসি ডুবন্ত জাহাজ। মানুষ টিএমসি কে ছেড়ে দিয়েছে তাদের কে বাঁচাবার দায়িত্ব কে দিয়েছে। মানুষের সঙ্গে থাকুন মানুষের সংকটে থাকুন।

অর্ধশিক্ষিতের দল, এই মন্তব্য করে বিজেপিকে বিঁধেছে তৃণমূল। সিপিএমের আবার দাবি, অর্মত্য সেনের বাড়ি নিয়ে বিতর্ক মেটাতে রাজ্য সরকারের এগিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কিছু অশিক্ষিত লোক যাদের বইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই যাদের সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই বাংলাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন না, তারা এ ধরনের কথাবার্তা বলেন। এরা অর্ধশিক্ষিত সেই কারণেই অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকে অপমান করতে পারেন? বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন,

বিষয়টির নিষ্পত্তি চেয়ে বিশ্বভারতীর কাছে দাবি করা উচিত রাজ্য সরকারের। বাড়িটি যে ওই জমিতে তাতে সন্দেহ নেই। ১৯৪০ এ তৈরি, কী হয়েছিল কে জানে? আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনকে রবীন্দ্রনাথই বলেছিলেন এখানে থাকুন।

নোবেলজয়ীর বাড়ি নিয়ে বিতর্কের তিন দিন পেরিয়ে গিয়েছে। শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে অনেক দূর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।