নয়াদিল্লি : পরিচয় লুকিয়ে কোনও মহিলাকে বিয়ে করলে বা বিয়ে-প্রোমোশন ও চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করলে তাকে 'অপরাধ' বলে গণ্য করা হবে। কেন্দ্রের আনা বিলে এমনই আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। যার জেরে অবসান হতে পারে ঔপনিবেশিক আমলের একটি আইন। শুক্রবার একথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ১৮৬০-এর আইপিসি-র পরিবর্তে জায়গা করে নিতে পারে 'ভারতীয় ন্যায় সংহিতা' (BNS) বিল। শাহ বলেন, 'মহিলাদের উপর অপরাধ সংক্রান্ত আইনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং তাঁরা যেসব সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা এই বিলে তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রথম বিয়ে-চাকরি-প্রোমোশনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস এবং মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়ে করলে তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। ' 


মূলত এইসব মামলায় এতদিন দেখা যেত, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন কোনও কোনও মহিলা। এই ধরনের ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধিয়ে নির্দিষ্টি কোনও বিধান নেই। নতুন এই বিলে তাই আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যা পরীক্ষা করে দেখবে স্ট্যান্ডিং কমিটি। এনিয়ে অপরাধ-বিষয়ক আইনজীবী শিল্পী জৈন বলছেন, 'এই ধরনের আইনের অভাবে, বিষয়গুলিকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয় না। উভয়পক্ষ থেকেই তাতে প্রচুর ব্যাখ্যা উঠে আসে। আমাদের দেশে মহিলারা পুরুষদের দ্বারা শোষিত হচ্ছেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনও কোনও পুরুষ সহবাস করেছেন। এবং প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট পুরুষের যদি ওই মহিলাকে বিয়ের কোনও ইচ্ছা না থাকে তাহলে সেটা এক ধরনের অপরাধ।' তবে তাঁর সংযোজন, 'চাকরি ও প্রোমোশনের আশ্বাসের সঙ্গে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে এই আইনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ঠিক নয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে প্রোমোশন/চাকরির প্রতিশ্রুতিকে জোড়া ঠিক নয়, কারণ বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভালবাসা/আস্থার উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, চাকরি/প্রোমোশনের আশ্বাস এমন লাভ যেটা মহিলা গ্রহণ করছেন যৌনতার পরিবর্তে। এটা পারস্পরিক সুবিধার সম্পর্ক।'


বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, খুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হবে অথবা যাবজ্জীবন কারদণ্ড। ধর্ষণের ঘটনায় ন্যূনতম ১০ বছর জেল বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ বছর সাজা দিতে হবে অথবা দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনের বাকি সময়ের জন্য কারাদণ্ড। ধর্ষণের পর যদি কোনও মহিলার মৃত্যু হয় বা এর ফলে মহিলার ক্রমাগত ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে থাকে, তাহলে দোষী ব্যক্তিকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে, যার মেয়াদ ২০ বছরের কম হবে না। যা সারাজীবন জেলে দীর্ঘায়িত হতে পারে। যার অর্থ, সেই ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনের বাকি অংশের জন্য কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড।