কলকাতা: যে ভাষাতে মা-কে মা বলে ডাকতে পারি, এর চেয়ে বড় সুখ আর কী সে হয়! তাই সেই ভাষাকে রক্ষা করতে একজোট হয়ে লড়াই চালিয়েছিল বাঙালি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। লক্ষ্য ছিল একটাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার। সেই লক্ষ্যপূরণ করতে ঝরেছে রক্ত, খালি হয়েছে বহু মায়ের কোল। কিন্তু দামাল সন্তানরা তাঁদের লড়াই ছাড়েনি সেদিন। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যে জয় তাঁরা নিয়ে এসেছিল সে জয়ের নাম- অমর ২১। সে জয়ের নাম- ভাষা আন্দোলন। 


আজ অবশ্য ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারি, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। এও তো কম জয় নয়। বাংলাদেশের সেই লড়াই আজ বিশ্বে সমাদৃত। ভাষার জন্য এমন লড়াইকে প্রতি মুহূর্তে কুর্নিশ জানায় গোটা বিশ্ব। কারণ এই দিন কেবল লড়াইয়ের নয়, বাংলাদেশের স্বপ্ন, আত্মত্যাগ, নিরলস সংগ্রাম এবং হার না মানা মনোভাব এবং ঐতিহ্যর বাহক। 


ভাষা আন্দোলনের এই লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু নাম। রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বার। সাহসী মাতৃভূমির দামাল ছেলে তাঁরা। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিলে বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও কয়েকজন। '৫২ এর ২১ এবং ২২ শে ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি ছোঁড়ায় শহিদদের রক্ত ছুঁয়ে বাঙালিরা শপথ নেয় দাবি আদায় না করে তাঁরা ঘরে ফিরবেন না। কাজটি খুব সহজ ছিল না। পাকিস্তানি শাসকবর্গের প্রতি বাঙালির মোহভঙ্গ ঘটায় সারা বছর জুড়ে মিটিং মিছিল চলতেই থাকল। ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এই দিনটি তাই ভাষা শহিদ দিবস হিসেবেও পরিচিত।


আরও পড়ুন, শ্রী শ্রী ঠাকুরের ১৮৮ তম জন্মতিথি, বেলুড় মঠে সারাদিনব্যাপী উৎসব


মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত লড়াই ও আত্মত্যাগের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, যে দেশের ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ শপথ নেয় নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে। ইতিহাসের পাতায় শুধু ভাষার জন্য আন্দোলন এবং নতুন দেশের জন্ম— এর দ্বিতীয় কোনও উদাহরণ পাওয়া অসম্ভব। 


ভাষা আন্দোলনের সেই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালি পায়ে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গাইতে গাইতেই শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন দেশবাসী। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হবে আজ। বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এই দিন।