কলকাতা : ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারি। সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের দিন। মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের লড়াই আজ বিশ্বে সমাদৃত। ভাষার জন্য এমন লড়াইকে কুর্নিশ জানায় গোটা বিশ্ব। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস  বাংলাদেশের স্বপ্নসফল হওয়ার প্রতীক। আত্মত্যাগকে সম্মান জানানোর উৎসব।  নিরলস সংগ্রামীদের স্মরণে নতজানু হওয়ার দিন। কিন্তু বাংলা তো শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের নয়, ভারত উপমহাদেশেই বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষার চর্চা রয়েছে। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পঠন-পাঠনের সুযোগ রয়েছে। বাংলার ব্যাপ্তি মহাসাগর পেরিয়ে আমেরিকা , ইউরোপেও। 


মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত লড়াই ও আত্মত্যাগের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, যে দেশের ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ শপথ নেয় নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে। সেই বাংলা ভাষার শিকড় খুঁজতে গেলে যেতে হবে অতি গভীরে।  মগধি, পালি, প্রাকৃত এবং সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। আর সেই পাকিস্তানের কারাচিতেই এখনও প্রায় ২১ লাখ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। করাচি সিটি করপোরেশনে অন্যতম অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত ভাষা বাংলা। ব্রিটেনেও স্বীকৃত পঞ্চম  অভিবাসী ভাষা বাংলা। সেখানেও লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন।


বাংলাদেশের প্রধান ভাষাই বাংলা। সে দেশে ১৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলায় কথা বলে। আর ভারতে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলেন। পরিসংখ্যান বলছে বাংলাই ভারতের দ্বিতীয় বহুলকথিত ভাষা। মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, মায়ানমার, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ইতালি, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়  বাঙালি প্রবাসীদের (বাংলাদেশের বাঙালি এবং ভারতীয় বাঙালি) সুপ্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায় রয়েছে।


বিভিন্ন স্বনামধন্য বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বাংলায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ । যেমন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে Faculty of Asian and Middle Eastern Studies এ বাংলা পড়়ার সুযোগ আছে। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর  South Asian Languages and Civilizations- এর আওতায় বাংলা পড়ার সুযোগ আছে। এছাড়াও বহু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। 


ভারতে শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, বিভিন্ন রাজ্যেই বহুল প্রচলিত বাংলা। ত্রিপুরায় প্রধান ভাষা বাংলা। তারপরই বলতে হয় সিকিমের কথা। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও আছে প্রচুর বাঙালি। এখানকার সব থেকে বেশি প্রচলিত ভাষা বাংলা। অসমে প্রচলনের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে বাংলা। মেঘালয়ে খাসি এবং গারোর পরই তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা। ছত্তীসগড়ে  হিন্দি এবং ওড়িয়া ভাষার পরেই তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা। ঝাড়খণ্ডেও বহু মানুষ বাংলাবাসী। এছাড়াও দিল্লি, হরিয়ানা, বিহার, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুরে বহু সংখ্যক মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।   


আরও পড়ুন, শাঁখ, উলুতে সন্দেশখালিতে পা, 'কাঁদনি মা কাঁদনি' বৃদ্ধাকে বুকে টানলেন শুভেন্দু