সিডনি: নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনি। এমনিতে এই শহরটা প্রাণোচ্ছল। তবে করোনা যেন রঙ কেড়েছে সিডনির। সকাল, দুপুর কিংবা রাত, সিডনি শহর এখন কার্যত ‘শ্মশান’। ফুটপাথ দিয়ে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে। বিগত দিনগুলোতে এক তিলও চাকা নড়েনি। বাড়ির দরজা, জানালা সব বন্ধ। সরকারিভাবে রেল ও বাস পরিষেবা চললেও মানুষের আনাগোনা নগন্য। ফেব্রুয়ারি মাসেও ছবিটা যেখানে ছিল ‘বসন্ত এসেছে দ্বারে’, সেখানে মার্চেই সিডনি যেন ‘আরবের মরুভূমি’।



(শুনশান সিডনির মেট্রো স্টেশন)


কলকাতার বালিগঞ্জের তরুণ শুভদীপ পাল মাস খানেক আগেই অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন। সেখানে সিডনি বিজনেস স্কুল ইউনিভার্সিটি অফ অলংগংয়ে অ্যাপলায়েড ফিনান্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ সিডনি গিয়েছেন। আপাতত রয়েছেন ক্যাম্পসিতে।  পরিস্থিতি ভয়াবহ। মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে পড়েছে। মেডিক্যাল পরিষেবা আর ব্যাঙ্কিং বাদ দিয়ে গোটাটাই লকডাউন। উলওয়ার্থস, কোলস, অ্যালডি-র মতো সুপারমার্কেটের জোগানও প্রায় শেষ। যে কারণে তৈরি হচ্ছে অন্ন সঙ্কট। সুদূর সিডনি থেকে এই কঠিন সময়ের অভিজ্ঞতা এবিপি আনন্দকে জানালেন স্বয়ং শুভদীপ। টেলিফোনে তিনি বলেন, “পাব, রেস্তোরাঁ, অফিস, কোর্ট সব বন্ধ। এখানে গুগলের অফিস রয়েছে, সেটাও বন্ধ। সব্জির দোকান আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে মানুষের আনাগোনা কম। বরং সুপারমার্কেটেই বেশি ভিড়। তবে সেখানেও স্টক প্রায় শেষ।”


পড়ুন: চতুর্থবারও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ, ‘চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না কণিকা’


শুভদীপ জানান, করোনায় অস্ট্রেলিয়ায় এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ৩ হাজার ৮০৯ জন। এদের মধ্যে সিডনিতেই আক্রান্ত ১৭৯১ জন। মৃত ১৪। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর কথায়, “অস্ট্রেলিয়া করোনার ততৃীয় ধাপের দিকে এগোচ্ছে। তার ওপর ক্যাম্পসি কোরিয়ান এবং চীনা পড়ুয়াদের পছন্দের জায়গা। এখানকার মানুষকে ফ্রি-তে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মতো বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য বিমা থাকলেও অনেক টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের নামমাত্র মেডিক্যাল পরিষেবা দেওয়া হয়।” তাঁর প্রশ্ন, যারা আগেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পড়তে এসেছেন, এখানে একা থাকছেন, তাঁদের কিছু হলে কে তার দায়িত্ব নেবে?


পড়ুন: মারা গেলেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত স্পেনের রাজকুমারী


শুভদীপ আরও জানান, কলকাতা সহ আরও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দাবি, আপাতত সেমিস্টার বাতিল করে পরে পরীক্ষা নিক বিশ্ববিদ্যালয়। শুভদীপ সহ আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট কমিউনিটির যুক্তি, “টাকা দিয়ে অনলাইন এডুকেশন নিতে আসিনি। অনলাইন পড়তে হলে বাড়িত থেকেই হয়ে যেত। ফেস টু ফেস কমিউনিকেশন প্রয়োজন।”


সিডনি শহরে থাকা খাওয়া মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার (ভারতীয় মুদ্রায়) টাকার ওপরে খরচ হয়। কানাডা সরকার অনেক পড়ুয়াদের ‘রুম রেন্ট’ মুকুব করেছে। ভারতীয়দের জন্য স্কট মরিসনের সরকার এমন পদক্ষেপ করুক, দাবি শুভদীপের। একই সঙ্গে লকডাউন পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্যও নিউ সাউথ ওয়েলস প্রশাসনের কাছে আর্জিও জানালেন কলকাতার এই বাঙালি তরুণ।