নয়াদিল্লি: ২১ শতক শেষ হলেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে বিশ্ব। (Global Warming) বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে প্রতি বছর উপকূলবর্তী এলাকা জলে তলিয়ে যাবে। অতীতে ১০০ বছরের মধ্যে একবার এই ধরনের ঘটনা ঘটত। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে এই আশঙ্কাজনক রিপোর্ট দিয়েছে 'ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ'স (IPCC)।


সোমবার এই রিপোর্ট পেশ করেছে প্যানেল। যেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সমুদ্রের জলস্তর অনেক বেড়ে যাবে। লাগামছাড়া বৃষ্টি ছাড়াও বন্যা লেগে থাকবে বছর জুড়ে। মূলত, হিমাবহ গলতে থাকায় এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, এদিন ২০২১-এর জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ষষ্ঠ মূল্যায়ন রিপোর্ট জমা দেয় (IPCC)। সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 
 
২৬ জুলাই থেকে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল আলোচনা। যাতে অংশগ্রহণ করেছে ১৯৫টি দেশের সরকারি প্রতিনিধি। গত ২ সপ্তাহ ধরে চলেছে এই আলোচনা। শেষপর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে IPCC-র রিপোর্টে সহমত হয়েছে সবাই। দেখা গিয়েছে , আগামী দশকে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব গ্রাস করবে গোটা বিশ্বকে। এ প্রসঙ্গে আইপিসিসি-র কো-চেয়ার পানমাও ঝাই বলেন, ''একাধিকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে পৃথিবার প্রায় সব অংশে। আমরা এখন যে ধরনের জলবায়ুর পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, ভবিষ্যতে সেখানে আরও গরম বাড়বে।''


কী রয়েছে রিপোর্টে ?


২০২২ সালের মধ্যে ষষ্ঠ মূল্যায়ন রিপোর্ট শেষ করবে 'ইন্টার গভর্নেমন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ'স (IPCC)। সোমবার এই রিপোর্টের প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে কিছু উদ্বেগজনক বিষয় সামনে এসেছে। 


  ২১ শতকে সমুদ্র স্তর অনেকটাই ওপরে উঠে আসবে। উপকূলবর্তী এলাকায় বন্যা, মাটি ধসের মতো ঘটনা লেগেই থাকবে। আগে ১০০ বছরে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যেত, তা প্রতি বছরেই দেখা যাবে।
  বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে গরমের মাত্রা বেড়ে যাবে। গ্রীষ্মকাল বাড়বে, শীতকাল কমবে। ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে , সেক্ষেত্রে অসহনীয় গরমের মুখে পড়তে হবে সবাইকে। মূলত, এতে কৃষিকাজ ও স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে।
  জলবায়ু পরিবর্তন বৃষ্টির ধরনকে প্রভাবিত করবে। উচ্চ অক্ষাংশে বৃষ্টিপাত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের বড় অংশে হ্রাস পাবে বৃষ্টি। অঞ্চল ভেদে বদলে যেতে পারে বর্ষার সময়।
  মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলেই বদলে যাবে জলবায়ু। শীতল সমুদ্রেও গরম হাওয়া বইতে শুরু করবে। সমুদ্রের জলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাবে, কমে যাবে অক্সিজেন লেভেল। যার ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র বদলে যাবে। এতে কেবল সমুদ্রের প্রাণীদের ক্ষতি হবে না এর ওপর নির্ভরশীল মানুষেরও সমস্যার সৃষ্টি হবে।
  উষ্ণায়নের ফলে শহরের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। শহর উপকূলবর্তী হলে প্রায় বন্যা দেখা দেবে এলাকায়। শহরগুলিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি ঘটবে। ফলে জল ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। 


কী করা যেতে পারে ?


পদার্থবিদ্যার নজরে দেখলে এই সময় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখতে হবে বিশ্ব উষ্ণায়ন। যা এখনও সম্ভব বলেই মনে করছেন গবেষকরা। একবার এই তাপমাত্রার মধ্যে উষ্ণায়ন বেঁধে রাখলে তাপপ্রবাহের বৃদ্ধি অনেকটাই ধীর গতিতে হবে। একেবারে খারাপ পরিস্থিতি হতে সময় লাগবে।


তবে এই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেঁধে রাখা সহজ কাজ নয়। এই কাজ করতে ২০৪০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নিয়ে আসতে হবে। তাতেও উষ্ণায়নের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ধরে রাখার সম্ভাবনা দুই-তৃতীয়াংশ। ২১ শতকের মাঝামাঝি এই এমিশন নেট-জিরোতে নিয়ে এলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেঁধে রাখার সম্ভাবনা এক-তৃতীয়াংশ। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন IPCC-র গবেষকা ফেদরিকো ওতো।


রিপোর্ট বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ করাটা খুব জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনে এই নির্গমন রোধ খুব কাজে আসবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমার পাশাপাশি বাতাসের গুণমান অনেকটাই ভালো হয়ে যাবে। একবার বাতাসের গুণমানের পরিবর্তন হলে ২০-৩০ বছরের মধ্যে জলবায়ু মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।