নয়াদিল্লি: এক যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনও। সেই আবহে আর এক যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাত নিয়ে এই মুহূর্তে তপ্ত পশ্চিম এশিয়া। আর এই সংঘাতে আমেরিকার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর বরাবরের মতো এবারও আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ ইজরায়েল ইরানে হামলা চালালে, গোড়ার দিকে দূরত্ব বজায় রাখছিল আমেরিকা। কিন্তু হঠাৎই মঞ্চে অবতীর্ণ হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়ে দেন, ইরানকে তিনি আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন। বেঁধে দিয়েছিলেন সময়সীমা, যা অতিক্রান্ত হয়েছে। আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে, ইরানের মাটিতে ইজরায়েলি হানার নেপথ্যে কি আমেরিকা রয়েছে? নাকি ফের কৃতিত্ব নিতে নেমে পড়েছেন তিনি? (Iran vs Israel War)

শুক্রবার প্রথমে ইরানের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইজরায়েল। ইরানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে নিশানা করে তারা, পাশাপাশি, পরমাণু পরিকাঠামোর উপরও আঘাত হানে। সেই সময় সাবধানী অবস্থান নিতে দেখা যায় আমেরিকাকে। আমেরিকার বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও জানান, একতরফা ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে ইজরায়েল। এর সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয় আমেরিকা। আমেরিকা শুধু নিজের সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা ওই অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। ইরান যাতে আমেরিকার স্বার্থে আঘাত না হানে, আমেরিকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করে, তাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। (Iran-Israel Conflict)

কিন্তু রুবিও ইরান ও ইজরায়েল সংঘাত থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, সোশ্য়াল মিডিয়ায় ঠিক উল্টো অবস্থান নিতে দেখা যায় ট্রাম্পকে। তিনি লেখেন, ‘সমঝোতার জন্য দু’মাস আগে ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম আমি। আজ ৬১তম দিন। কী করণীয় বলেছিলাম ওদের। কিন্তু ওরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। এখনও হয়ত দ্বিতীয় সুযোগ আছে ওদের কাছে’। তিনি আরও লেখেন, ‘বার বার সমঝোতার সুযোগ দিয়েছি ইরানকে। কড়া ভাষায় জানিয়েছিলাম, সমঝোতায় এসো। কিন্তু এত চেষ্টা-চরিত্রের পরও ওরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি’। 

ট্রাম্পের বক্তব্য, “আমি বলেছিলাম, কল্পনাও করতে পারবে না কী পরিস্থিতি হতে পারে। আমেরিকা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করে এবং ইজরায়েলের কাছে তা বহুল পরিমাণে রয়েছে। কোনটা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, ওরা তা জানে। যারা বড় বড় কথা বলছিল, সকলে মারা গিয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এখনও সময় আছে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার। পরের হামলা আরও নৃশংস হতে পারে, সব শেষ হয়ে যেতে পারে। সব শেষ হওয়া যাওয়ার আগে সমঝোতায় আসা উচিত ইরানের’।

ইরানের বিরুদ্ধে এই হামলাকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ বলে উল্লেখ করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইরানে হামলা চালিয়ে শীর্ষস্তরের ছয় বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে তেল আভিভ। ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের অনেকেও প্রাণ হারিয়েছেন হামলায়। ইজরায়েলের দাবি, পরমাণু শক্তি বৃদ্ধি করতে বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে ইরান। কয়েক দিনের মধ্যেই ১৫টি পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলতে পারত তারা, যা ইজরায়েলের অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করেই হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরান যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, আসলে আগ্রাসন দেখাতেই হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। কিন্তু আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে যখন পরমাণু শক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, সেই আবহে ইজরায়েলের এই হামলা নিছক কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে আমেরিকার ভূমিকাও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এই হামলায় কোনও ভূমিকা নেই বলে যদিও দাবি করেছেন রুবিও, কিন্তু ইরানের পরমাণু শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকাও। ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখাই লক্ষ্য় আমেরিকার। আবার ইজরায়েলের সহযোগী দেশ হিসেবেও বরাবর নিজের অবস্থান বজায় রেখে এসেছে তারা। যে কারণে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলেও, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি তারা। ফলে ইরান এবং ইজরায়েলের সংঘাতে আমেরিকার ভূমিকা একেবারেই নিরপেক্ষ নয়, বরং আড়াল থেকে আমেরিকাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।