নয়াদিল্লি: একবছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতি পড়েনি। তার মধ্যেই নয়া যুদ্ধের আশঙ্কা দানা বাধল। ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। আর সেই নিয়েই যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোরাল হয়ে উঠেছে পশ্চিম এশিয়ায়। ইরানকে এর পাল্টা জবাব দেবে কি না ইজরায়েল, আমেরিকা সেক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করবে, সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলও। কেউ ইরান, প্যালেস্তাইন, লেবাননকে সমর্থন করছে, কেউ আবার ইজরায়েল-আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছে। (Iran-Israel War Situation)


মঙ্গলবার রাতে ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্যালেস্তাইন এবং লেবাননে যে 'হত্যালীলা' চালাচ্ছে ইজরায়েল, তার জবাবেই হামলা বলে দাবি করা হয়েছে। ইজরায়েল পাল্টা আঘাত হানলে ফল মারাত্মক হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে তারা। অন্য দিকে, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি, হামলা চালিয়ে মারাত্মক 'ভুল' করে ফেলেছে ইরান। এর ফল তাদের ভুগতে হবেই। যদিও সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত দেয়নি কোনও পক্ষই। (Middle East War Situation)


এমন পরিস্থিতিতে বরাবরের মতোই ইজরায়েলের পাশে রয়েছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউসে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বাইডেন বলেন, "কোনও ধন্দ নেই। আমেরিকা ইজরায়েলকে সম্পূর্ণ ভাবে সমর্থন করছে।" আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইরানের তীব্র নিন্দা করেছেন। ইরানের এমন আচরণ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং একযোগে সকলের তাদের নিন্দা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ব্লিঙ্কেন। প্যালেস্তাইনের গাজায় ইজরায়েলের আগ্রাসী আচরণ নিয়ে কিন্তু কিন্তু ভাব থাকলেও, ইরানের এবং লেবাননের হেজবোল্লার ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থহীন ভাবে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। যদিও লেবাননে ইজরায়েলি হামলায় অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে বলে খবর মিলছে। 


একই ভাবে, ইজরায়েলের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে ব্রিটেনও। ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেছে তারা। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান জন হিলি জানিয়েছেন, ইরান থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইজরায়েলকে সাহায্য করেছে তাঁদের সেনাও। ফ্রান্স ইতিমধ্যেই পশ্চিম এশিয়ায় অতিরিক্ত সেনা পাঠাতে শুরু করেছে। ইরানের মোকাবিলায় তারাও ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে।  ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ জানান, ইজরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 


জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা করেন। ইরানের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান। কিন্তু কোনও ভাবেই পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্রেক হোক, তা চান না ইশিবা। তিনি বলেন, "ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। এর তীব্র নিন্দা করছি আমরা। কিন্তু একই সঙ্গে বলব, পরিস্থিতি যাতে যুদ্ধের দিকে না গড়ায়, তার জন্য সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে রাজি আছি।" ফোনে বাইডেনের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। জার্মানির বিদেশমন্ত্রীও ইরানের নিন্দা করেন। ইরানের এই হামলা যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশের বিদেশমন্ত্রী অ্যানালেনা বায়েরবক। অস্ট্রেলিয়াও ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে।


অন্য দিকে, ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। দেশের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তইপ এর্দোয়ান সরাসরি ইজরায়েলের নিন্দা করেছেন। যেভাবে লেবানন খুঁড়ে ফেলছে ইজরায়েল, তাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করেন এর্দোয়ান। তাঁর বক্তব্য, "ইজরায়েল যা করছে, আজ না হয় কাল তাদের আটকাতেই হবে। সমস্ত দেশ, আন্তর্জাতিক সংগঠন, বিশেষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জকে বলব, সময় না করে ইজরায়েলকে আটকানো উচিত। আমি প্রকাশ্যে বলছি, ইজরায়েলি নেতৃত্ব ধর্মান্ধের মতো আচরণ করছে। প্যালেস্তাইন, লেবাননের আমাদের জমির উপরও নজর পড়বে ওদের।" নেতানিয়াহুকে অ্যাডল্ফ হিটলারের সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। বলেন, "হিটলারকে যেমন থামতে হয়েছিল, নেতানিয়াহুকেও থামতে হবে।"


পশ্চিম এশিয়ায় এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তার জন্য সরাসরি আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছে রাশিয়া। দেশের বিদেশ মন্ত্রকেক মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার কথায়, 'পশ্চিম এশিয়ায় বাইডেন প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রক্তক্ষয়ী নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ওরা যে ব্যর্থ, তা হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতেই স্পষ্ট'। লেবাননে এই মুহূর্তে ইজরায়েলি বাহিনী ঢুকে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হেজবোল্লার প্রধান হাসান নাসরল্লা আগেই মারা গিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে বরাবরই শত্রুতা। ১৯৮২ সালে ইজরায়েল লেবানন আক্রমণ করার পরই হেজবোল্লার জন্ম হয়। প্রথমে পেজার বিস্ফোরণ, তার পর ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণ এবং তা থেকে বোমা-গুলি বর্ষণে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে তারা।


লেবাননে ইজরায়েলের হানলার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়েমেনের হুথি সংগঠন। ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা। 
এমন পরিস্থিতিতে চিন কার পক্ষ নেয়, সেদিকেও তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল। গত মাসে ইরানের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন চিনা কূটনীতিকরা।  সেখানে তাঁরা ইরানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন বলে জানা গিয়েছে।  রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠকে ইরানের সার্বভৌমিকতা, নিরাপত্তা এবং জাতীয় অখণ্ডতার পক্ষে সওয়াল করে চিন। তাদের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, "আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, চিন বরাবরই ইরানের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপসৃষ্টির বিরোধী আমরা।" গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষেও সওয়াল করে চিন।