নয়াদিল্লি: এক বছর ধরে ইজরায়েল বনাম হামাস যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধে ইতি পড়া তো দূর, বরং যত দিন যাচ্ছে আরও তেতে উঠছে পশ্চিম এশিয়া। অতি সম্প্রতি লেবানন এবং ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এতদিন চরিত্রের ভূমিকা পালন করলেও, এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এবার সক্রিয় ভূমিকায় উঠে এল ইরান। ছায়াযুদ্ধ-নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি ইজরায়েলে হামলা চালাল তারা। মঙ্গলবার রাতে একসঙ্গে প্রায় ২০০ রকেট ছুড়েছে ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে। ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা Mossad-এর সদর দফতর লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়। এর ফলে Mossad-এর সদর দফতরের সামনে বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে। (Iran-Israel War)


সোশ্যাল মিডিয়ায় Mossad-এর সদর দফতরের সামনের অংশ বলে একাধিক ভিডিও সামনে এসেছে। ওই সব ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। তবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেছে। জানা গিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েই বিরাট আকারের ওই গর্ত তৈরি হয়েছে Mossad-এর সদর দফতরের সামনে।  ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভে Mossad-এর সদর দফতরটি অবস্থিত। তার সামনে, মেরেকেটে ৫০০ ফুট দূরে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি এসে পড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রটি আছড়ে পড়ে যে গহ্বর তৈরি হয়েছে, তার গভীরতা প্রায় ৩০ ফুট এবং সবমিলিয়ে আয়তন প্রায় ৫০ ফুট। (Viral Video)


ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে সাদা একটি ভবনকে Mossad-এর সদর দফতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে সামনেই বিরাট আকারের গর্তটি চোখে পড়ছে। গর্তের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মাটিক ডেলা। ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে সৃষ্ট গর্ত দেখতে ভিড় করতেও দেখা যায় কিছু মানুষকে।  যেখানে গর্তটি তৈরি হয়েছে, সেটি একটি পার্কিং লট বলে জানা গিয়েছে। শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে এমনিতে ইজরায়েলের কাছে আয়রন ডোম প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু গতকাল রাতে ত্রিমুখী হামলা রুখতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। ফলে দেশের মধ্যভাগে এবং দক্ষিণ অংশে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে।



ইরানের Revolutionary Guard Corps (IRGC) জানিয়েছে, তেল আভিভে সামরিক শিবিরগুলি লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে তারা। Mossad-এর সদর দফতরের সামনে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ছাড়াও, নেভাতম বায়ুসেনা ঘাঁটি এবং তেল নফ বায়ুসেনা ঘাঁটিতেও হামলা চালানো হয় বলে খবর। যদিও ইজরায়েলি বাহিনীর দাবি, হামলায় কয়েক জন আহত হলেও, তেমন বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাদের সামরিক শক্তি আগের মতোই রয়েছে। এর পর ফের লেবাননে হেজবোল্লার শিবির লক্ষ্য করে হামাল চালায় ইজরায়েল। তাদের লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ে ইরান ভুল করেছে বলে দাবি ইজরায়েলের। ইরানকে এর কড়া মূল্য চোকাতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।


ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, "বড় ভুল করে ফেলেছে ইরান। ওদের এর মূল্য চোকাতেই হবে।" ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হেগারি বলেন, "ইরান হামলা চালানোয় পরিস্থিতি আরও গুরুতর এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এর ফল ভোগ করতে হবে। আমরা এর জবাব দেব, যেখানে, যখন, যেভাবে ইচ্ছে হবে, ইজরায়েল সরকারের নির্দেশ মতো কাজ করব।" 


অন্য দিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'বৈধ অধিকারের উপর ভিত্তি করে, ইরানের শান্তি এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইহুদি আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হয়েছে। ইরানের নাগরিকদের স্বার্থরক্ষায় এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। নেতানিয়াহুকে জানাতে চাই, ইরান যুদ্ধবাজ নয়। কিন্তু যে কোনও হুমকির মুখে দৃঢ় অবস্থান নেয়। আমাদের ক্ষমতার একটি ঝলক দেখলেন মাত্র। ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়াবেন না'। 


পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ইরান এবং ইজরায়েল, দুই দেশের ভূমিকাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রাসী নীতির জন্য গত একবছরে বার বার যদিও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইজরায়েলকে। গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং সম্প্রতি বেইরুটে তাদের হামলায় যে প্রাণহানি, সম্পত্তিহানি হয়েছে, তা নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে আড়াল থেকে ইরান যেমন হেজবোল্লা, হামাস এবং ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুথিকে সমর্থন জুগিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ ছিল যেমন, প্রকাশ্যেই অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইজরায়েলকে সাহায্য করে আসছে আমেরিকা। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে এবার আর আড়াল-আবডাল নয়, সরাসরি ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। পাল্টা আক্রমণ চালালে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। আবার ইরানের মোকাবিলা করতে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ফ্রান্সও সেনা পাঠানোর ঘোষণা করেছে।