কলকাতা: বাংলাদেশের আদালত মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে তাঁকে। মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সেই রায়কে ইতিমধ্যেই প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন হাসিনা। এবার সেই নিয়ে মুখ খুললেন হাসিনার সঙ্গেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনা আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। (Asaduzzaman Khan Kamal)

Continues below advertisement

আসাদুজ্জামান প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা। হাসিনা জমানায়, শেষ একদশক তিনি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এবার এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে আদালতের রায় নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। বাংলাদেশের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়েও নিজের মতামত তুলে ধরলেন। (Sheikh Hasina)

প্রশ্ন: রায়ের পর পরই আপনার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয় ফোনে। ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিচার হয়েছে বলেছিলেন। কেন ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলছেন?

Continues below advertisement

আসাদুজ্জামান: কার বিচার করবে? বঙ্গবন্ধুর কন্যা, যিনি বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছেন, বদলে দিয়েছেন, মাথাপিছু আয়কে ৭০০ ডলার থেকে ৩০০০ ডলারে নিয়ে গিয়েছেন… যিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন, তার বিচার করবে? আর একটু পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, কারা বিচার করল? ৫ অগাস্টের পর যারা ক্ষমতায় বসল, একটা মেটিকুলাস ডিজাইন। সরকার প্রধান আমেরিকায় গিয়ে বললেন, ‘এমনি এমনি এটা হয়নি। কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনা করে, একেবারে ছক কষে এই আন্দোলন করেছে। আন্দোলনে প্রথম ছিল ছাত্ররা। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল ওরা। প্রধানমন্ত্রী বলে দেন, ‘আমাদের কোটাই বাতিল করে দেওয়া হবে, কোনও সংরক্ষণ থাকবে না’। আন্দোলন সেখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ হয়নি। আন্দোলনকে আরও বেগবান করে, যে সব রাজনৈতিক দল…যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে ছিল, পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতা করেছিল যারা, রাজাকার বাহিনী তৈরি করে, আলবদর বাহিনী তৈরি করে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছিল। কোটিখানেক মানুষ বসতবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা, ভারত তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সব ধরনের সহযোগিতা করেছিল ভারত। ভারতের ১৫ হাজার সৈনিক আমাদের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেন। তাঁদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, যিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছিলেন, তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য এই কোর্ট। আরও গভীরে গেলে বোঝা যাবে, হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। কেন? কারণ বুঝতে পেরেছিল ওরা যে বঙ্গবন্ধুর যে উত্তরসূরী রয়ে গিয়েছেন, যাঁর ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত বইছে, তাঁকে শেষ না করা পর্যন্ত   আওয়ামি লিগকে শেষ করা যাবে না, মুক্তিকামী বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে শেষ করা যাবে না। ১৯ বার ব্যর্থ হয়েছে আগে। তাই পরিকল্পিত ভাবে ছক কষে তাঁর নামে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হল। মানবাধিকারকে হত্যা করেছেন বলে হল মামলা। আমরাই এই আদালত তৈরি করেছিলাম…যারা নাকি যুদ্ধাপরাধী ছিল, যারা লক্ষ লক্ষ হত্যা করেছিল। একটি উদাহরণ বার বার দিয়ে থাকি আমি, পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী তিন দিনে ২২ হাজার মানুষকে হত্য়া করে। আড়াই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হারানো, ১৫ হাজার ভারতীয় সৈনিকের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশের বিপক্ষে যাঁরা ছিলেন, আজ তাঁরাই স্বাধীনতার কথা বলছে। এই কোর্টের প্রধান কৌঁসুলি যিনি, তাজউল ইসলাম। তাজউল সাহেব কে? ইনি জামাতের কর্মী, জামাতের নেতা। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের হয়ে, গোলাম আজমের মতো রাজাকারদের জন্য সেই কোর্টে আজ তিনি প্রধান কৌঁসুলি, মাননীয়া প্রধানের বিরুদ্ধে সামনে আসছেন। তিন বিচারপতির বিচার নিয়ে কিছু বলব না। আমি শুধু বলব, তাঁদের যে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী বিচার করেছেন। বিচার চলাকালীন প্রধান বিচারপতি শেষের দিকে প্রায় ২০-২৫ দিন কোর্টই যাননি। বসে বসে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রায় লিখছিলেন। তাই যেতে পারেননি আদালতে। বাকি দুই পালা করে কেউ বিকেলে, কেউ সকালে থাকতেন। সবকিছু সাজানো ছিল। হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনী ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, সাক্ষীদের জেরা করা, কিছুই হয়নি। সাজানো নাটক দিয়ে, একজনকে রাজসাক্ষী বানিয়ে শেষ করে দিলেন সব। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হল। এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। দুঃখের কথা যেমন, তেমন হাসির খোরাকও সৃষ্টি হয়েছে। আজ যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁরা জামাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। তাই পাকিস্তানের প্রধান বলেছেন, ’৭১-এর প্রতিশোধ নিলেন। তাঁদের সাজানো কোর্ট, এই রায় মেনে নেবেন না দেশের মানুষ।

প্রশ্ন: আপনাদের জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছিল, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। রায় বেরনোর পর দেখা গেল, তাঁর মুখে হাসি। মুখে বললেন, খারাপ লাগছেন, কিন্তু মুখে হাসি। কী বলবেন?

আসাদুজ্জামান: শুধু এটাই নয়, আর একটি ভিডিও-তে দেখবেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপচারিতায় এক বিচারপতি ওঁকে বলেন, ‘আপনি তো ওঁদের ডিফএন্ড করছেন?’ কিন্তু উনি বলেন, ‘এটা তো আমাকে করতেই হবে! না হলে কেমনে হবে?’ বলে আবার হাসছেন। ইনিও জামাত ঘরানার একজন উকিল এবং জামাতের কর্মী। সবাই জানে। এর চেয়ে বেশি কী হবে। নির্দোষ বলা ছাড়া কোনও প্রচেষ্টাই দেখা যায়নি। প্রচেষ্টা থাকলেই কী, না থাকলেই কী! আইনের তোয়াক্কা না করেই হয়েছে সব। কোনও গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ হয়নি। তাহলে এই আদালত কেন বিচার করবে? মৃত্যুর সংখ্য়া যদি দেখেন, স্বাস্থ্য বিভাগ বলে ৬৫০, কখনও বলে ৮০০, কখনও ১৪০০। এক এক বার এক এক রকম কথা। বাংলাদেশে প্রত্যেক মাসে গড়ে ১৫০ জনের মতো মানুষ পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। সব মিলিয়ে ধরলে ওর কাছাকাছি যেতে পারে। পুলিশ হত্যার কোনও বিচার হল না। আবার ৪ তারিখ থেকে যত হত্যা হয়েছে, তারা যেগুলি করেছে, তারও বিচার হল না। এগুলি সব যদি হিসেব করলে দেখবেন, গোটাটাই সাজানো খেলা। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা। ১৯ বার ব্যর্থ হয়ে এখন শেষবারের মাধ্যমে আদালতের মাধ্যমে চেষ্টা হচ্ছে।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা এবং আপনাকে দেশ ছাড়তে হল কেন? কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল?

আসাদুজ্জামান: একটা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। অনেক কিছু ব্যর্থতা ছিল আমাদের। আর একটু যদি কথা বলি, দেখবেন, সেনা তার সঠিক কাজ করেনি। বাকি বাহিনী সঠিক তথ্য দেয়নি আমাদের। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুের জন্য কাঁদেন। উনি দেখলেন, ওঁর বংশের সবাইকে ১৫ অগাস্ট শেষ করে দিয়েছে। শুধু তিনি ও তাঁর ছোট বোন বেঁচে রয়েছেন। উনি আর কোনও হত্যা, রক্ত চাননি। তাই ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে ভারতে চলে যান, যাতে রক্ত ঝরা বন্ধ হয়। কিন্তু তার পরও রক্ত ঝরা বন্ধ হয়নি। আমাদের নেতা-কর্মীদের বাডি়ঘর দখল হয়, লুঠতরাজ হয়, প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে, খুন করে মেরে ফেলা হয় আমাদের নেতাদের। বীভৎস ভাবে মেরেছে। আমাদের ৩০ হাজারের মতো নেতাকর্মী জেলে। জেলে ১৫০ জন মন্ত্রী-সাংসদ। তাই প্রধানমন্ত্রী চাননি আর খুন হোক বা রক্ত ঝরুক। আর আমার কথা যদি বলেন, আমি প্রায় এক-দেড় মাস ছিলাম। দেখলাম বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। জামিন হচ্ছে না, উকিল নিয়োগ হচ্ছে না। ডিফেন্ড করার মতো কেউ ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করি আমিও। এটা পালিয়ে যাওয়া নয়, সাময়িক ভাবে দেশ ত্যাগ করেছি। অবশ্যই আবার ফিরে যাব। আন্দোলনের মাধ্যমে এই ঘটনাগুলি নির্মূল করব।

প্রশ্ন: চাঁনখারপুল হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সেখানেও আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। কী বলবেন?

আসাদুজ্জামান: আওয়ামি লিগ-কে স্বাধীনতার পর যাঁরা নিয়ে এসেছিলেন, যাঁরা এই দেশের মতাদর্শে যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের শেষ করে দেওয়াই লক্ষ্য। স্বাধীনতার পক্ষে যাঁরা আমাদের শক্তি ছিল, সেই ১৪ দল, যেমন ধরুন, ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন সাহেবকে কারা অন্তরীণ করা হয়েছে। বয়স্ক মানুষ নড়তে চড়তে পারেন না। সামনে যাকে পাচ্ছে, কারা অন্তরীণ করছে। কোনও উকিল গেলেও মামলা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের নামেও। এই অরাজক, ভীতি, একটা সাজানো গোছানো রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে, ধ্বংসের রাষ্ট্র ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। তাই আমাদের নেতাকর্মীদের অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, কিছু দিন পর ভোট করানো হতে পারে। আওয়ামি লিগ বলছে, নো ভোট। এই পরিস্থিতিতে আপনি বা শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরতে পারবেন বলে আশা করছেন?

আসাদুজ্জামান: আওয়ামি লিগ এমন একটি দল, যে সবসময় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে করতে, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে করতে এখানে এসেছে। আওয়ামি লিগের পথ মসৃণ নয় খুব। সব সময়ই সত্যের জন্য লড়াই করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর পর যাঁর নেতৃত্বে আওয়ামি লিগ সুন্দর রাস্তায় দাঁড়াতে পেরেছিল, যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগোচ্ছিল, সেই সময়ই এই ঘটনা ঘটানো হল। কবে ফিরতে পারব, ভোটে দাঁড়াব কি না জানতে চাইছেন। আওয়ামি লিগ এমন একটি দল, যারা সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলেছে, যুদ্ধ করেছে তার জন্য। আওয়ামি লিগ নির্বাচনমুখী দল। আজ দেখুন আওয়ামি লিগ-কে শুধু নির্বাচনে নিষিদ্ধ করেনি, নেতা-কর্মীদের বাড়িছাড়া করে দিয়েছে। লক্ষ খানেক মামলা দিয়েছে। যাকে পারছে ধরছে। নির্বাচনে যোগ দেওযার সুযোগই দিচ্ছে না। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগই নেই যেখানে, সেখানে আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। আমরা আন্দোলন করে অবশ্যই… জনগণের জয় হবেই আশা করছি।

প্রশ্ন: এই পুরো পরিস্থিতির জন্য কোনও বিদেশি শক্তির কি হাত আছে? পাকিস্তান বা আমেরিকার হাত আছে কি? কী মনে হয়?

আসাদুজ্জামান: দেখুন, সরাসরি যারা সামনে আসছে, আপনারা সবাই দেখছেন, পাকিস্তান। পাকিস্তান তো বলেছে, ’৭১-এর প্রতিশোধ নিয়েছে। আজ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জেনারেল সাহেবরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তানের যে গোয়েন্দা সংস্থা, ISI বাংলাদেশে অফিস করে কাজ করছে। ক্যান্টমেন্টের ভিতরেই তাদের অফিস বলে শুনছি। তাই এটা তো স্পষ্ট, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের সহযোগিতা করেছিল, তাদের দ্বারাই আজ দেশ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। পাকিস্তান অবশ্যই অগ্রভাগে ছিল। তার পিছনে কে ছিল, তা নিজেরা বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবেন। আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমাদের নেত্রীও বার বার খোলসা করে বলেছেন। আমি শুধু বলব, সামনে ছিল পাকিস্তান, পিছনে আরও শক্তি ছিল।

প্রশ্ন: সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অনেক কিছু হয়েছে দেখেছি। আমেরিকার হাত ছিল বলে মনে হয় কি?

আসাদুজ্জামান: দেখুন সেন্ট মার্টিন এমন একটি দ্বীপ, কৌশলগত কারণে অনেকেরই নজর ছিল সেটির উপর। আমেরিকার কথা বললেন, তাদেরও ছিল। প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, ‘আমি যদি সেন্ট মার্টিন, চট্টগ্রাম পোর্ট ছেড়ে দিতাম, তাহলে অনেকদিন থাকতে পারতাম, সেবা করতে পারতাম’। আজকের অবৈধ সরকার চট্টগ্রাম ও অন্যান্য পোর্ট পাকাপাকি ভাবে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। 

প্রশ্ন: ভারতে যে ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ হচ্ছে, সেই জঙ্গিরা কি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করছে? কী মনে হচ্ছে? জঙ্গি কার্যকলাপ, ভারতকে বিপদে ফেলতে কি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমানে?

আসাদুজ্জামান: আমি একটা কথা বলছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা কী নীতি ফলো করেছি? দুর্নীতি, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলাব়্যান্স নীতি নিয়েছিলাম। স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম, আমাদের এক ইঞ্চি জমিও কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে দেব না। আমাদের এক ইঞ্চি জমিতে বসে অন্য দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাবে, বিচ্ছিন্নতাবাদে মদত দেবে, তা হতে দেব না। পাকিস্তানের মদত আছে কি না বলছেন। জঙ্গি সংক্রান্ত কাজে পাকিস্তান স্বীকৃত। অনেক জঙ্গি সংগঠন রয়েছে সেখানে। বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছিল বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের আস্তানা। সব গুঁড়িয়ে দিয়েছিলাম আমরা। সবাইকে জেলে ভরেছিলাম। এই সরকার ছেড়ে দিয়েছে সকলকে। আজ প্রকাশ্যে, সদর্পে অফিস চালাচ্ছে তারা, আবার বাহিনী তৈরি করছে। যেখানেই প্রয়োজন নিয়ে যাবে বলে এসব করছে। আমি নিশ্চিত, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতে প্রয়োজন পড়লেও পাঠাবে।

প্রশ্ন: আপনারা ক্ষমতায় থাকাকালীন ছাত্র আন্দোলনো গুলি চালানো হয়েছিল। এটাকে কী ভাবে ব্য়াখ্যা করবেন?

আসাদুজ্জামান: দেখুন, ছাত্র আন্দোলনে কিন্তু গুলি চলেনি। গুলি কখন চলেছে? আপনারা দেখেছেন, সিরাজগঞ্জ থানায় ১৩ জন পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। ছাত্ররা কি পুলিশকে মেরেছে? মেরে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এসব হত্য়ার আন্দোলন ছাত্ররা কখনও করেনি। তারা অধ্যয়ন, চাকরির জন্য সংরক্ষণ নিয়ে বলেছিল। সেটা শেষ হয়ে গেলে সরে গিয়েছিল। তাদের জোর করে আনা হয়েছিল আবার। ইউনূস সরকার নতুন একটি দল গড়ারও চেষ্টা করছে এখন। ছাত্ররা জ্ঞান অর্জন করবে, দেশকে শক্তিশালী করবে, তা দেশের আকাঙ্খা। আমাদের সময় ছাত্ররা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে মেধা দিয়ে। এখন ছাত্ররা কোথায় যাচ্ছে, দেখছেন।

প্রশ্ন: এই গোটা ঘটনায় মহম্মদ ইউনূসের কোনও হাত ছিল বলে মনে হয়?

আসাদুজ্জামান: মহম্মদ ইউনূসের একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল। তার সঙ্গে অনেকে যুক্ত হয়েছে, যেমন, যারা ইউনূসের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেই জামাত ইসলাম। হিন্দ-ই-তেহরিকের মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের লোকগুলি। গোটা বিশ্বে তারা নিষিদ্ধ। তারাই এখন দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউনূস তাদের প্যাট্রোনাইজ করেছেন, তাদের পরিকল্পনায় সহযোগিতা করেছেন, যা তিনি বীরদর্পে আমেরিকায় বলেছেন, পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকে উপদেষ্টাদের একজন বলেছেন। ইউনূসের পরিকল্পনা ছিল, ১/১১-এর সময় একটা নতুন দল তৈরি করে, মাইনাস টু ফর্মুলা অর্থাৎ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা ছিল। বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। এবার পরিকল্পিত ভাবে, বহির্শক্তির সহযোগিতায় তিনি এসেছেন। ইউনূস কখনও দেশের বন্ধু হতে পারেন না। তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। এখন দেশবিরোধী কাজকর্ম করছেন। বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন বন্দর নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী কখনও চট্টগ্রাম পোর্ট কাউকে দেননি, ইউনূস দিয়ে দিয়েছেন। ইউনূস যা করার করেছেন, এখন জঙ্গি সংগঠন জামাত ক্ষমতায় আসতে তাঁর ঘাড়ে পা রেখেছে।

প্রশ্ন: আপনাদের সরকারের পর যখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এল, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার শুরু হয়। চিন্ময়প্রভু আজও জেলে রয়েছেন। এখনও জেলে রয়েছেন, ছাড়ানো গেল না। তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবী দাঁড়াচ্ছিলেন না। যদি আলোকপাত করেন।

আসাদুজ্জামান: ঠিকই বলেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মাথায় নিয়ে ছিলাম। সবচেয়ে বড় আদর্শ ছিল, অসাম্প্রদায়িক জায়গা হবে বাংলাদেশ। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান বৌদ্ধ সবাই মিলেমিশে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সেই জায়গা থেকে ছিটকে এসে আজ আমরা একটা সাম্প্রদায়িকতাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। চিন্ময়প্রভু হিন্দু ধর্মকে আলোকিত করতে কাজ করছেন, জ্ঞানী মানুষ হিসেবে পরিচিত তিনি। তাঁকে জেলখানায় যেতে হয়েছে কেন? বিভিন্ন জায়গায় কত মানুষকে হত্যা করেছে, বলতে পারব না। তবে আমার জানা, ৫ অগাস্টের পর অনেক হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে। হিন্দুদের বসতবাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। আমাদের খাদ্যমন্ত্রী এবং আর এক মন্ত্রী জেলখানায়। আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশের চেতনা আজ মাটিতে লুটোচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি আজ দেশ চালাচ্ছে।

প্রশ্ন: রায়ের পর শেখ হাসিনার কথা হয়েছে? কী বলছেন তিনি?

আসাদুজ্জামান: আমার সঙ্গে তো মাঝে মাঝেই কথা হয়। কথা হয়েছে। অবশ্যই হয়েছে।

প্রশ্ন: তিনি কি কোনও ভাবে আতঙ্কিত? কী ভাবছেন তিনি? 

আসাদুজ্জামান: আপনি আমাকে হাসালেন। প্রধানমন্ত্রীর গোটা পরিবারকেই তো শেষ করে দিয়েছে! আপনারা জানেন, গুলির পর গুলি দিয়ে, কিশোর রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছে, ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক কষ্ট নিয়ে তিনি দেশে এসেছিলেন। অদম্য সাহসের মানুষ তিনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বাংলার জয়গান করেছেন। বঙ্গবন্ধু কিছুই ভয় পেতেন না। ঠিক তাঁরই মেয়ে। ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত বইছে। তিনি বলেছেন, ফাঁসি নিয়ে বঙ্গবন্ধু যেমন গান গেয়েছেন, ‘আমরা আবশ্যই ওভারকাম করব। আমরা অবশ্যই আবার বাংলাদেশে ফিরে যাব। আবার সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করব আমরা’।