নয়াদিল্লি: যুদ্ধ়বিরতির পক্ষে বার বার দাবি উঠলেও, গাজায় ইজরায়েলি হানায় হতাহত বেড়েই চলেছে লাগাতার। এবার মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এল কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা থেকে। যুদ্ধ মাথায় নিয়েই সম্প্রতি যমজ সন্তানের বাবা হন মহম্মদ আল-কুমসান নামের এক যুবক। স্ত্রী এবং সদ্যোজাত সন্তানদের বাড়িতে রেখে জন্মের শংসাপত্র নিতে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে আর কাউকে জীবিত দেখলেন না তিনি। (Israel Gaza War)
প্যালেস্তাইনের গাজার দের আর বালাহ্-র ঘটনা। তিন দিন আগে মহম্মদের স্ত্রী জুমানা (২৮) যমজ সন্তানের জন্ম দেন, ছেলে আসের এবং মেয়ে আয়সেলের। মঙ্গলবার ছেলেমেয়ের জন্মের তারিখ সরকারি খাতায় নথিভুক্ত করিয়ে জন্মের শংসাপত্র তুলতে বাড়ি থেকে বেরোন মহম্মদ। কিছু ক্ষণ পরই পকেটে মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে। বের করে দেখেন, প্রতিবেশি ফোন করছেন। হ্যালো বলতেই জানতে পারেন, ইজরায়েলি গোলায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে তাঁদের আবাসন। দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। (Israel Palestine War)
ফোন পেয়েই সেন্ট্রাল গাজার আল আকসা শহিদ হাসপাতালে ছোটেন মহম্মদ। হাসপাতালে তখন ভিড় উপচে পড়ছে। স্ত্রী-সন্তানকে একটি বার দেখার জন্য আকুল হয়ে পড়েন তিনি। চারপাশের সকলে তাঁকে সান্ত্বনা জোগান। কিন্তু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মহম্মদ। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম CNN জানিয়েছে, হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে কাতর স্বরে স্ত্রীকে একটি বার দেখার জন্য মিনতি করছিলেন মহম্মদ। সবে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন স্ত্রী, শিশু দু'টি এখনও বাবাকে ঠিক মতো চিনে উঠতে পারেনি বলে কাঁদতে থাকেন। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
CNN জানিয়েছে, স্ত্রী, দুই সদ্যোজাত সন্তান এবং শাশুড়িকে ফ্ল্যাটে রেখে বেরিয়েছিলেন মহম্মদ। সেই সময়ই ইজরায়েলের ছোড়া মুহুর্মুহু গোলা এসে আছড়ে পড়ে। একজনও রক্ষা পাননি। CNN যে ফুটেজ সামনে এসেছে, তাতে সন্তানদের জন্মের শংসাপত্র হাতে নিয়ে বিধ্বস্ত চেহারা ধরা পড়েছে মহম্মদের। মাথা চাপড়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। একটা সময় পর হাসপাতাল চত্বরে স্ত্রী, সন্তান এবং শাশুড়ির দেহের সামনে বসে প্রার্থনা করতে দেখা যায় তাঁকে। মহম্মদের স্ত্রী জুমানা পেশায় ফার্মাসিস্ট ছিলেন। গতকালের ওই গোলার আঘাতে আবাসনের ২৩ জন মারা যান বলে জানা গিয়েছে। মহম্মদের দুই সদ্যোজাত সন্তান ছাড়াও, ন'মাসের আর এক শিশু মারা গিয়েছে।
এই ঘটনার উল্লেখ কের ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস-এর আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া চায় CNN. তাঁকে বলতে শোনা যায়, "ওপরওয়ালা স্বর্গোদ্যানে আমাদের সকলকে মেলাবেন। যাঁদের হারাচ্ছি, উপরে সবার সঙ্গে দেখা হবে।" মহম্মদ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, যুদ্ধ চলাকালীন কিছু দিন আগেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, গত বছর জুলাইয়ে জুমানার সঙ্গে বিয়ে হয় মহম্মদের।
এখনও পর্যন্ত গাজায় ইজরায়েলি হামলায় প্রায় ৪০ হাজার প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৬ হাজার ৪০০। আহতের সংখ্যা ৯২ হাজার। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে, প্যালেস্তাইনের মোট জনসংখ্যা ২২ লক্ষ, যার মধ্যে ১০ মাসের যুদ্ধ গৃহহীন ১৯ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়। দুর্ভিক্ষ এবং সংক্রমণও ছড়িয়েছে। গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দিতেও ইজরায়েল বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ।