নয়াদিল্লি: প্যালেস্তাইনে এখনও মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের মধ্যেও যুদ্ধ শেষ হয়নি। সেই আবহেই পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা। এবার কাতারে বোমা নিক্ষেপ করল ইজরায়েল। পর পর বেশ কয়েক বার তীব্র বিস্ফোরণ শোনা গিয়েছে। হামলার কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইজরায়েল। তাদের দাবি, সেখানে লুকিয়ে থাকা হামাস নেতাদের নিশানা করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। যে বিল্ডিং লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে হামাসের শীর্ষনেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে হতাহতের তালিকায় কে কে রয়েছেন, কতটা ক্ষতি হয়েছে, এখনই তা স্পষ্ট হয়নি। (Israel Attacks Qatar)

কাতারের রাজধানী দোহায় পর পর বিস্ফোরণ ঘটেছে। এত তীব্র হামলা হয় যে কেঁপে ওঠে চারিদিক। ইজরায়েলি সেনা জানিয়েছে, আকাশপথে দোহায় বোমাবর্ষণ করেছে তারা। ঠিক কোথায় হামলা চালানো হয়েছে, তা যদিও খোলসা করেনি ইজরায়েল। তবে তাদের সেনার তরফে বলা হয়েছে, হামাসের জঙ্গিনেতাদের নিশানা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য়ে হামলা চালানো হয়েছে। সেই মতো সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল, যাতে নিরীহ মানুষের কোনও ক্ষতি না হয়। ইজরায়েলি বাহিনীর তরফে লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বহু বছর ধরে হামাস নেতৃত্ব সন্ত্রাসী কাজকর্ম চালিয়েছে। ৭ অক্টোবরের গণহত্যার জন্য় প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ওঁরা। ইজরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন’। (Israel Strikes Qatar)

ইজরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচের বক্তব্য, “সন্ত্রাসবাদীরা কোথাও সুরক্ষা পাবে না। পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই নয়। একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত। ইজরায়েলি সেনা এবং গোয়েন্দারা নিখুঁত কাজ করেছেন।” প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর বলে, ‘হামাসের সন্ত্রাসী নেতাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন অভিযান ছিল এটা। ইজায়েলই উদ্যোগী হয়, ইজরায়েলই চালায়, পূর্ণ দায় ইজরায়েলরই’।

হামাসের দাবি, সমঝোতা বৈঠক করতে দোহায় গিয়েছিল তাদের নেতৃত্ব। সেই সময় হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দোহার আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যেতে দেখা গিয়েছে। একটি বিল্ডিং ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে কাতার। তাদের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, “ভাষায় যতটা প্রকাশ করা যায়, ততটা কড়া ভাষায় ইজরায়েলের এই হামলার নিন্দা করছি আমরা। হামাসের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের একটি দল দোহায় ছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এই হামলা চালানো হয়েছে। কাতারের সকলের জন্য বিপদ বিপদ ডেকে এনেছে ইজরায়েল।”

গত জুন মাসেই ইরানের ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। সেই ইরানও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। তাদের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। কাতারের জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হেনেছে ইজরায়েল। প্যালেস্তাইন নিয়ে সমঝোতার উপর হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলা শুধু পশ্চিম এশিয়ার জন্য় নয়, আন্তর্জাতিক মহলের জন্যই বিপদের ঘণ্টা”। 

ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে কাতার। সেই নিয়ে বৈঠকের সময় হামলা চালানো নিয়ে ইজরায়েলের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টনোও গুতারেসের বক্তব্য, “কাতারের জাতীয় অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হেনেছে ইজরায়েল। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ে বরাবর ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে কাতার। তাদের উপরই হামলা চালানো হয়েছে। চিরস্থায়ী শান্তিস্থাপনে সব পক্ষকে অংশগ্রহণ করতে হয়, সেই প্রক্রিয়াকে ধংস করা উচিত নয় কোনও পক্ষের।” আমেরিকার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, হামলার কথা শুনেছে তারা। আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। জর্ডন, কুয়েত, সংযুক্ত আমির আমিরশাহি, ওমানও ইজরায়েলের নিন্দা করেছে।