নয়াদিল্লি: হাসপাতালে বিস্ফোরণ ঘটানো নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। তার মধ্যেই গাজায় চরম সঙ্কট উপস্থিত। সেখানকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফায় জ্বালানি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় মৃত্যু হল এক শিশুর (Al-Shifa Hospital)। আরও ৩৯ শিশু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আইসিইউ-তে ভর্তি আরও একজন মারা গিয়েছেন।  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এভাবে চললে আর কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যুমিছিল দেখা দেবে। কাউকে নড়াচড়া করতে দেখলেই ইজরায়েল গুলি-বোমা ছুড়ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। চতুর্দিক থেকে হাসপাতালটি ঘিরে ইজরায়েলের সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন রয়েছে বলেও অভিযোগ। (Israel Palestine War)


গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল দার আল-শিফা, বাংলায় তর্জমা করলে অর্থ হয়, 'আরোগ্য কেন্দ্র'। মোট তিনটি কেন্দ্র রয়েছে হাসপাতালের, সার্জিক্যাল, ইন্টারনাল মেডিসিন, অবসটেট্রিক্স ও গাইনোকলজি। রিমাল এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটি। একসময় সেটি ইংরেজবাহিনীর ঘাঁটি ছিল। ১৯৪৬ সালে হাসপাতালটি গড়ে ওঠে। মিশরের শাসন ছিল যখন, হাসপাতালের বিস্তার শুরু সেই সময়। (Israel Palestine Conflict)


বর্তমানে ওই হাসপাতাল চত্বরে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয়। ইজরায়েলি বোমা, রকেট থেকে মাথা বাঁচিয়ে হাসপাতালের করিডর এবং লনে আশ্রয় নিয়েছেন। যদিও ইজরায়েলের দাবি, সেখান থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে হামাস। হাসপাতালের তরফে যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। 


আরও পড়ুন: Iceland Earthquakes: পর পর ৮০০ বার ভূমিকম্প, মাটি ঠেলে উঠে আসছে লাভার স্রোত, জরুরি অবস্থা আইসল্যান্ডে


আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর মহম্মদ আবি সালমিয়া জানিয়েছেন, হাসপাতার চত্বরে জ্বালানি, জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে হাসপাতাল চত্বরকে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের অধীনে কর্মরত,  হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক তানিয়া হজ হাজান লন্ডন থেকে জানান, গাজার পরিস্থিতি দেখে স্তব্ধ তিনি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মানবিক সঙ্কটের মুখে হাসপাতালটি। অন্য দেশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। রোজ হাজার হাজার মানুষ গুরতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন বলে জানান।


গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান, মনির আল-বশর হাসপাতালে উপস্থিত রয়েছেন। তিনি জানান, হাসপাতালেই দেহ সমাধিস্থ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তিনি বলেন, "কবর খোঁড়ার যন্ত্রপাতিও নেই। যেমন তেমন করে গর্ত খুঁড়ে দেহ পুতে দিচ্ছি আমরা, নইলে মড়ক লেগে যাবে। কারণ রাস্তায় না জানি কতদিন ধরে পড়ে ছিল কতশত দেহ।"


এই পরিস্থিতির জন্য আন্তর্জাতিক মহলের দিকে আঙুল তুলেছেন গাজার উপস্বাস্থ্য মন্ত্রী ইউসেফ আবু আলরিশ। তাঁর বক্তব্য, "এই জন্যই গোটা দুনিয়াকে সতর্ক করেছিলাম আমরা। বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানির অভাবে বন্ধ জেনারেটর। ৩৯ সদ্যোজাত ইনকিউবেটরে রয়েছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তারা। কেউ নড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারছেন না। কারণ স্নাইপাররা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তৈরিই রয়েছে। মুহুর্মুহু গুলি চালাচ্ছে। ড্রোনের মাধ্যমেও হামলা চালাতে হচ্ছে।" হাসপাতালের একটি অংশে রকেটের আঘাতে ভেঙে পড়েছে বলেও জানান তিনি। হাসপাতাল থেকে পালাতে গিয়ে বেশ কিছু পরিবার হানলার শিকার হয়, তাদের দেহ হাসপাতালের বাইরে এখনও পড়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।