নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারত। এবার সৌর অভিযানের পালা। শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর  মহাকাশে সৌরযান Aditya-L1 পাঠাচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. এই মুহূর্তে  চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। এর আওতায় নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সূর্যকে নিরীক্ষণ করবেন বিজ্ঞানীরা।  ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে থেকে ভারতের সৌরযান নজরদারি চালাবে। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট কী, অভিযানের মূল উদ্দেশ্য কী, জানা গেল বিশদ তথ্য। (Aditya L1)


শনিবার সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে রওনা দেবে ভারতের সৌরযান Aditya-L1. সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের যে আবরণ, সেটির উপরই নজরদারি চলবে। তার জন্য ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1-এ অবস্থান করবে ভারতের সৌরযান। এই অভিযান থেকে সূর্যের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসবে বলে আশাবাদী ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। (ISRO Solar Mission)


যে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান করবে ভারতের সৌরযান, সেটি আসলে কী, তাও বিশদে তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। জানা গিয়েছে, মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। কারণ সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে, মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের উপর নির্বিঘ্নে নজরদরি চালানো যায়। 



আরও পড়ুন: Chandrayaan 3: 'চাঁদমামার উঠোনে যেন খেলা করছে কোনও শিশু', নিরাপদ রাস্তার খোঁজে রোভার 'প্রজ্ঞান'


সূর্যের উপর নজরদারি চালানোর জন্য, গণিত বিশারদ জোসেফ লুইস ল্যাগ্রেঞ্জ এই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1-এর আবিষ্কার করেন। ISRO জানিয়েছে, ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1 থেকে কোনও রকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। সূর্যের বায়ুমণ্ডলে ঠিক কী ঘটছে, মহাকাশের সার্বিক আবহাওয়ায় তার কী প্রভাব পড়ছে, তৎক্ষণাৎই সব তথ্য় হাতে পাওয়া সম্ভব। 


ISRO জানিয়েছে, PSLV-C57 রকেটের সাহায্যে Aditya-L1 সৌরযানের উৎক্ষেপণ হবে। মোট সাতটি পেলোড থাকছে ভারতের সৌরযানে। এর মাধ্যমে সূর্যের বহিরাবরণ, সূর্যপৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যেকার প্লাজমার আচ্ছাদন, সৌর আলোকমণ্ডল এবং সৌর বায়ুমণ্ডলের উপর নজরদারি চালানো হবে। 


সূর্যের উপর নজরদারি চালাতে করোনাগ্রাফ ব্যবহার করবে Aditya-L1 সৌরযান। এই করোনাগ্রাফ হল এমন একটি যন্ত্র, যা সৌরযানের উপর বসানো একটি চাকতি। তাতে সূর্যরশ্মি আবদ্ধ হয়ে যায় এবং ওই চাকতির মধ্যেই সূর্যের বহিরাবরণ ফুটে ওঠে, যা দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব হয়। এই করোনাগ্রাফ না থাকলে সৌরযানের সেন্সর কাজ করবে না। এ বছরের গোড়ায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (IIA) ISRO-র হাতে নিজেদের তৈরি ভিজিবল লাইন এমিসন করোনাগ্রাফ (VELC) তুলে দেয়। সেটিই বসানো হবে Aditya-L1 সৌরযানে।


এই করোনাগ্রাফ ছাড়াও, Aditya-L1 সৌরযানে ছ'টি যন্ত্র থাকছে। এর মধ্যে চারটি দূর থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হবে। বাকি তিনটি সূর্য থেকে সৌরঝড়ের মাধ্যমে বাইরে ঠিকরে বেরনো অণু পরীক্ষা করে দেখবে, সৌরজগতের উপর তার কী প্রভাব, দেখা হবে খতিয়ে।