নয়াদিল্লি: রাতারাতি পদত্যাগের পর থেকে খোঁজ নেই। তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন, কেউ জানেন না। সেই আবহেই এবার পেনশনের জন্য় আবেদন করলেন দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। রাজস্থানের প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে প্রাপ্ত পেনশনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি। বিধানসভা সচিবালয়ের তরফে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর। কিন্তু ধনকড় কোথায়, তা এখনও জানা যায়নি। সেই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন UBT সাংসদ সঞ্জয় রাউত। (Jagdeep Dhankhar Applies for Pension)
১৯৯৩ সালে অজমের জেলার কিসানগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন ধনকড়। কংগ্রেসের টিকিটে সেবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিধায়ক হিসেবে কার্যকালের মেয়াদ সম্পন্ন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিধানসভার নিয়ামক কমিটিরও সদস্য ছিলেন ধনকড়। রাজস্থানে নেতাদের জন্য পেনশনের বেশ কয়েক রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বিধায়ক এবং সাংসদ, দুই পদের জন্যই পেনশনের আবেদন জানানো যায়। কিন্তু ধনকড় আপাতত প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবেই পেনশনের আবেদন জানিয়েছেন। (Jagdeep Dhankhar News)
প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা পাবেন ধনকড়। বয়স যেহেতু ৭০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাই আরও ২০ শতাংশ টাকা যুক্ত হবে পেনশনে। বয়স ৮০ পেরোলে ৩০ শতাংশ যুক্ত হয়। এই মুহূর্তে ধনকড়ের বয়স ৭৪ বছর। ২০ শতাংশের হিসেবে প্রতিমাসে মাসে ৪২ হাজার টাকা পেনশন পাবেন। বয়স ৮০ হলে পেনশন আরও বাড়বে।
ধনকড় পেনশনের জন্য আবেদন করেছে বলে মেনে নিয়েছেন রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার বাসুদেব দেবনানি। তিনি জানান, প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে পেনশনের আবেদন জানিয়েছেন ধনকড়। সেই মতো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব সম্পন্ন হলে পেনশন শুরু হয়ে যাবে। পাশাপাশি, বিনামূল্য চিকিৎসা, সরকারি কাজে যাতায়াতের খরচ, সরকারি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ, এমন একাধিক সুযোগ সুবিধা পাবেন।
পেশায় আইনজীবী ধনকড় দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বিধায়কের পাশাপাশি, লোকসভার সাংসদও নির্বাচিত হন। কেন্দ্রের মন্ত্রীও ছিলেন একসময়। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। সর্বশেষে দেশের উপরাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন, যার দরুণ রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হন। তবে কেরিয়ারের শেষ দিকেই সবচেয়ে বেশি বিতর্কে জড়ান তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের সঙ্গে পদে পদে সংঘাত বাধে তাঁর। সাংবিধানিক পদে থেকে ধনকড় নির্বাচিত সরকারের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন, বাধা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ তোলেন মমতা।
একই ভাবে উপরাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েও বার বার বিতর্কে জড়ান ধনকড়। সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেন তিনি। বিরোধী শিবিরের সাংসদদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২১ জুলাই হঠাৎই পদত্যাগপত্র জমা দেন ধনকড়। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে, তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিরোধীরা। ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে আজও লোকচক্ষুর আড়ালে ধনকড়। তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন, কেন তা গোপন রাখা হচ্ছে, প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সেই নিয়ে চর্চার মধ্যেই পেনশনের আবেদন জানালেন ধনকড়।