নয়াদিল্লি: মঙ্গলবারের কর্মসূচি পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু সোমবার রাতেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত। কার্যকালের মেয়াদ দু’বছর বাকি থাকতে কেন উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনকড়, সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছেই। স্বাস্থ্যজনিত কারণেই ধনকড় ইস্তফা দিয়েছেন বলে যদিও দাবি করছে বিজেপি, কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন,বিনা রাজনৈতিক কারণে বা কোনও চাপ ছাড়াই কি আচমকা কেউ এভাবে ইস্তফা দিতে পারেন? আর সেই আবহেই নতুন তথ্য সামনে এল। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করাতেই ধনকড়কে সরকারের বিরাগভাজন হতে হয় বলে খবর। (Jagdeep Dhankhar Resignation)
সংসদের বাদল অধিবেশনে বিচারপতি বর্মাকে ইমপিচ করার প্রস্তাব জমা পড়তে পারে বলে আগেই খবর মিলেছিল। মঙ্গলবার সেই মতো বিরোধীদের আনা প্রস্তাব গ্রহণ করেন ধনকড়। কিন্তু দিল্লি সূত্রে খবর, তাঁর এই সিদ্ধান্ত মনঃপুত হয়নি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের। বিচারপতি বর্মাকে সরানোর প্রথম প্রস্তাব কেন্দ্রই জমা দিতে চেয়েছিল, যাতে দুর্নীতি বিরোধী ভাবমূর্তি বজায় থাকে। সেই মতো নিজের দলের সাংসদ থেকে বিরোধী সাংসদদের সই সংগ্রহ করে লোকসভায় পেশ করার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। কিন্তু ধনকড় বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করায়, তাদের সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খায়। রাজ্যসভার তদানীন্তন চেয়ারপার্সন ধনকড় বিরোধীদের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা নিয়ে সরকারকে কিছু জানাননি বলেও জানা যাচ্ছে। (Jagdeep Dhankhar News)
বেশ কিছু দিন ধরেই দেশের বিচারবিভাগের প্রতি কড়া বার্তা দিতে শোনা যাচ্ছিল ধনকড়কে। এমনকি দেশের সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে একরকম তাড়াহুড়ো করেই তিনি বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন বলে চর্চা শুরু হয় বিজেপি-র অন্দরে। ধনকড় ‘সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছেন’ বলে বিজেপি সাংসদদের বার্তা দেয় মোদি সরকার। দিল্লির একটি সূত্র বলছে, ধনকড় যদি সরকারকে ওই প্রস্তাবের ব্যাপারে কিছু জানাতেন, সেক্ষেত্রে বিজেপি সাংসদরাও তাতে সই করতেন। তাহলে সরকার যে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে না, সেই বার্তা দেওয়া যেত দেশকে। কিন্তু ধনকড় ওই প্রস্তাব গ্রহণ করায় বিরোধীদের সুবিধা হয়ে যায়।
এনডিটিভি, এবিপি লাইভ-সহ বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ধনকড় বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করার পরই শীর্ষস্তরের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের গফতরে ওই বৈঠক হয়। রাজ্যসভায় বিজেপি-র চিফ হুইপকে দলের বাকি সাংসদদের ডেকে আনতে বলা হয় সেখানে। ১০টি গোষ্ঠীতে বিজেপি সাংসদদের ডেকে আগে থেকে তৈরি রাখা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে সই করানো হয়। এর পর NDA জোটে শামিল বাকি সাংসদদের সই নেওয়া হয় ওই প্রস্তাবে। সকলকে মুখ বন্ধ রাখতে বলার পাশাপাশি, আগামী চারদিন দিল্লি ছাড়া যাবে না বলে জানানো হয়। ধনকড়কে ওই প্রস্তাবের কথা জানানো হয় এর পর।
শুধু তাই নয়, মোদি সরকারের শীর্ষ স্তরের মন্ত্রীরা বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে ধনকড়কে নিয়ে বার্তাও দেন। ধনকড় ‘সীমা ছাড়িয়েছেন’ বলে জানানো হয় তাঁদের। এর আগেও কীভাবে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেন তিনি, সেকথাও জানানো হয়। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ধনকড়। সোমবার রাতে উপরাষ্ট্রপতির সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে ইস্তফাপত্রটি পোস্ট করা হয়। কার্যকালের মেয়াদ দু’বছর বাকি থাকতে ইস্তফার নেপথ্যে স্বাস্থ্যজনিত কারণ তুলে ধরেন ধনকড়। তাই সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ধনকড়ের আরোগ্য কামনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা পোস্ট করেন মোদিও।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নিযুক্ত হওয়া থেকে উপরাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পর লাগাতার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন ধনকড়। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে বার বার সংঘাত বাধে তাঁর, আবার রাজ্যসভাতেও বিরোধীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, কয়েক মাস আগেই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। কিন্তু যেভাবে ইস্তফা দিলেন ধনকড়, তা নিয়ে সেই বিরোধীরাই প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের দাবি, সকলকে অন্ধকারে রেখে বিষয়টি সম্পন্ন করেছে কেন্দ্র। এ নিয়ে স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিল বলে মত তাঁদের। ধনকড় নিজে থেকে ইস্তফা দেননি, তাঁকে ইস্তফা দেওয়ানো হয়েছে বলে মত বিরোধীদের।