জলপাইগুড়ি: ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কারুর পছন্দ পাহাড়, আবার কারুর নদী, সমুদ্রই টানে মন। তবে একই সঙ্গে অল্প দূরত্বেই যদি পাহাড়, নদী ও অভয়ারণ্য থাকে, তাহলে ব্যাপারটা কিন্দু মন্দ হয় না। জলপাইগুড়িতে বেরাতে গেলে এমনটা একেবারেই অসম্ভব নয়। শান্ত, স্নিগ্ধ, মনোরম জলপাইগুড়ি জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলি (Jalpaiguri Travel Destinations) নিয়ে কথা বলতে আলোচনা যে ঠিক কতক্ষণ চলবে তা বলা মুশকিল। 


দশকের পর দশক ধরে ডুয়ার্স বাংলা তো বটেই, ভারতেরও অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্রগুলির একটি। গরুমারা অভয়ারণ্য়ে বন্য প্রাণীদের দেখার জন্য প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান। উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার সঙ্গে বাকি বাংলার সংযোগ ঘটানো জলপাইগুড়ি জেলাতেই কিন্তু অবস্থিত এই পর্যটনকেন্দ্রগুলি। ভারতের প্রাচীনতম এই জেলার অন্যতম বৈচিত্রই কিন্তু এর আকর্ষণ কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে। রেলপথে সুদর্শন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে এই জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে কিন্তু খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। এই জেলায় পৌঁছতে হলে বাগডোগরা বিমানবন্দরই সবথেকে। জলপাইগুড়ি বেড়াতে গেলে কিন্তু নিজেদের ভ্রমণের তালিকায় নিম্নলিখিত স্থানগুলি অবশ্যই রাখবেন।


ডুয়ার্স


বাংলা-অসম সীমানার কাছে অবস্থিত ডুয়ার্স (Dooars) ভ্রমণপ্রেমীদের অত্যন্ত পছন্দের স্থান। ডুয়ার্সের নামের অর্থই হল দরজা। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ডুয়ার্স হয়ে যেমন অসমে প্রবেশ করা যায়, তেমনই ডুয়ার্স কিন্তু ভারত থেকে ভুটান প্রবেশপথও বটে। তিস্তা থেকে ধানসিরি পর্যন্ত ৩৫০ কিলোমিটার লম্বা ডুয়ার্স তরাই অঞ্চলের অন্তর্গত। ডুয়ার্সের সবুজ গাছপালায় ভরায় চারিপাশ প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে ধরতে বাধ্য।


গরুমারা অভয়ারণ্য


ডুয়ার্সের পাশাপাশি গরুমারা অভয়ারণ্যের (Gorumara National Park) প্রতি পর্যটকদের প্রবল আকর্ষণ। ভারতীয় বনদফতর গুরুমারাকে দেশের সংরক্ষিত স্থানগুলির মধ্যে একেবারে শীর্ষস্তরে জায়গা দিয়েছে। তরাই অঞ্চলে অবস্থিত এই অভয়ারণ্য রাইনো সংরক্ষণের জন্য খ্যাত। সবুজেঘেরা গরুমারায় শান্ত প্রকৃতি ও উত্তাল বন্যপ্রাণীরদেক এক অদ্ভুত মেলবন্ধন দেখা যায়।


বক্সা


অভয়ারণ্য় ও বন্যপ্রাণীর কথা যখন হচ্ছেই, তখন বক্সাকে (Buxa Tiger Reserve) বাদ দেওয়া একেবারেই সম্ভব। ৭৬০ স্কোয়ার কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত বক্সা জাতীয় উদ্যানের বাঘ সংরক্ষণের জন্য জগতজোড়া খ্যাতি। বাঘের পাশাপাশি হাতি, শূকর, গন্ধগোকুলের মতো প্রাণীদেরও এই উদ্যানে দেখা যায়।


জয়ন্তী অভয়ারণ্য


বক্সা বাঘ সংরক্ষণের মধ্যেই একটি ছোট্ট অভয়ারণ্য হল জয়ন্তী অভয়ারণ্য। এই স্থানটি হাইকার্সদের বিশেষভাবে টানে। অপরূপ পারিপার্শ্বিক দৃশ্য এবং একাধিক মনমুগ্ধকর ঝর্না হাইকার্সদের আকর্ষিত করে। বক্সাদুয়ার থেকে জয়ন্তীর ১৩ কিলোমিটার পথ হাইকিংয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়া মহাকাল নামে একটি পাহাড়ও রয়েছে জয়ন্তীতে।


সুন্তালে খোলা


সুন্তালে খোলা বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র। একই নামে এই স্থানে এক মনোরম জলধারাও রয়েছে। নেপালি ভাষায় সুন্তালের অর্থ কমলা এবং খোলার অর্থ ছোট জলধারা। স্যামসিংয়ের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এটি। সুন্তালে খোলা যাওয়ার পথে এই জায়গাটির বাঁ-দিক বরাবর গাছপালায় ঘেরা বনজঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও সুন্তালে খোলা থেকে একাধিক পাহাড়ের ট্রেকিং শুরু হয়। চা বাগান, পাহাড় ও সুন্দর গাছপালার টানে পর্যটকরা বারবার এই জায়গা দর্শনে ছুটে আসেন।


অন্যান্য দর্শনীয় স্থান


চাঙ্গে জলপ্রপাত, তিস্তা নদীর উপকূলে অবস্থিত জুবলি পার্ক, কারোলা নদীর তীরের তিস্তা উদ্যান, চিলাপাতা সংরক্ষণকেন্দ্রগুলিতে জলপাইগুড়ির অন্যতম প্রসিদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র।


কোন সময়ে যাবেন?


বছরের ১২ মাসই জলপাইগুড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলি দেখতে যেতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে অক্টোবর থেকে মার্চের (শীত, বসন্তকালের আশেপাশের সময়) মধ্যেকার সময়টায় এখানে পর্যটকরা সবথেকে বেশি ভিড় জমান এবং এই সময়টাই জলপাইগুড়ি ভ্রমণের আদর্শ সময়।


কীভাবে পৌঁছবেন?


কলকাতা, নয়াদিল্লি, চেন্নাই ও গুয়াহাটি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে আসার বিমান রয়েছে। বাগডোগারাই এই জেলার সবথেকে কাছের বিমানবন্দর। বাগডোগরা থেকে সহজেই ভাড়ার ট্যাক্সি, বাসে করে জলপাইগুড়ি পৌঁছে যাওয়া যায়।


উত্তরবঙ্গ জাতীয় পরিবহন কর্পারেশন, দক্ষিণবঙ্গ জাতীয় পরিবহন কর্পারেশন, কলকাতা পরিবহন কর্পারেশনের একাধিক বাসের মাধ্যমে সড়কপথে সহজেই জলপাইগুড়ি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।


কলকাতার এবং পারিপার্শ্বিক স্থান থেকে আগত পর্যটকরা নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশনে নেমে সহজেই এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলি ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে তো আছেই। এর মাধ্য়মেই জলপাইগুড়ি থেকে সহজে দার্জিলিংয়েও পৌঁছে যাওয়া যায়।


আরও পড়ুন: ম্যাল, টয় ট্রেন, চায়ের নস্টালজিয়া, কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি, আর কী দেখবেন দার্জিলিংয়ে ?