ভোপাল: মধ্যপ্রদেশে জাম গেটে দুই প্রশিক্ষণরত সেনা আধিকারিককে মারধর এবং তাঁদের তরুণী বান্ধবীকে গণধর্ষণের ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। এতটাই আঘাত পরেয়েছেন নির্যাতিতা যে, কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। বার বার চেষ্টা করেও তাঁর বয়ান রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। আর তাতেই ফিরে আসছে ভয়ঙ্কর স্মৃতি। কারণ এর আগে, কাজলীগড় দুর্গেও এমন ঘটনা ঘটে। মাত্র দু'বছরের সময়কালে সেখানে ৪৫টিরও বেশি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। (Kajligarh Fort)


হোলকার বংশের আমলে কাজলীগড় দুর্গ এবং জাম গেটের নির্মাণ। জাম গেট 'জাম দরওয়াজা' নামে পরিচিত স্থানীয়দের কাছে। হোলকার সাম্রাজ্যের দুই রাজধানী, মাহেশ্বর এবং ইন্দৌরের মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলতেই নির্মাণ জাম গেটের। কাজলীগড় দুর্গে মোতায়েন থাকত সামরিক বাহিনী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ওই জায়গাগুলি সময়ের সঙ্গে পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় সেখানকার কাজলীগড় দুর্গেই কয়েক বছর আগে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে যায়। জাম গেটে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অপরাধে ফিরে এসেছে সেই স্মৃতি। (Jam Gate Incident)


নিভৃতে সময় কাটাতে ওই এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে যুগলদের। নির্জনতার সুযোগ নিয়ে সেখানে তাঁদের কাছ থেকে তোলা আদায়, লুঠপাটের অভিযোগও মেলে প্রায়শই। জাম গেটে যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে মিল রয়েছে আজ থেকে ন'বছর আগে কাজলীগড় দুর্গে ঘটে যাওয়া নক্ক্যারজনক ঘটনাবলীর। 


২০১৫ সালের ঘটনা। একদল BTech পড়ুয়া কাজলীগড় দুর্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে অপরাধ গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়েন ওই পড়ুয়ারা। মারধরের পাশাপাশি, তাঁদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, জিনিসপত্র লুঠ করে নেওয়া হয়। সেই মামলার তদন্তে নেমে স্থানীয় যুবকদের একটি দলের খোঁজ পায় পুলিশ, আচমকা যাদের হঠাৎ করে প্রাপ্তি বিলাসবহুল জীবনযাপন নজর কেড়েছিল সকলের। 


ওই দলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় পুলিশ। আর তাতেই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে আসে। দলের মাথা সঞ্জয় কাটরা, কর্ণ দাবর এবং এক নাবালককে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, দু'বছরের সময়কালে কমপক্ষে ৪৫টি গণধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত ওই দল। বেড়াতে আসা যুগলদের লুঠ করে, সেই টাকায় মাদক নিত তারা। ধৃতেরা অপরাধ স্বীকার করলেও, সেই তদন্ত এগোয়নি বেশি দূর। এমনকি রাজ্যের হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলেও, সুরাহা হয়নি।


এবারে জাম গেটের ঘটনায় পুলিশ প্রথনমে অভিযোগ নিতে চায়নি বলে যেমন অভিযোগ উঠছে, সেবারও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। মামলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চেয়ে আদালতে আবেদন জমা পড়ে। যদিও পুলিশের দাবি ছিল, অভিযুক্তরা অপরাধ স্বীকার করলে, নির্যাতিতাদের অধিকাংশই ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সেই সময়। আজ পর্যন্ত সেই মামলা এগোয়নি। জাম গেটের ঘটনায় স্বভাবতই সেই ঘটনার স্মৃতি ফিরে এসেছে।  


গত মঙ্গলবার জাম গেটে দুই প্রশিক্ষণরত সেনা আধিকারিককে মারধর করে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা, লুঠপাটও চালায়। তাঁদের সঙ্গে থাকা তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন ছ'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এখনও পর্যন্ত, ২৭ বছরের অনিল বরোর, ২৩ বছরের পবন বানসুনিয়া এবং ২৫ বছরের রিতেশ ভবর।  খুন, নিষিদ্ধ মদের কারবার, লুঠপাট, ডাকাতি-সহ একাধিক মামলায় আগেও নাম জড়িয়েছিল ওই তিন জনের। রোহিত গিরওয়াল, সন্দীপ ওয়ারিয়া, সচিন মাকওয়ানা নামের আরও তিন জনের নাম উঠে আসছে এই ঘটনা। অপরাধ মামলায় আগে থেকে পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে তাদেরও।