শ্রীনগর : তাঁকে এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স অন্যান্য নেতাদের শহিদদের সমাধিস্থলে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। সেই প্রচেষ্টা প্রতিহত করে পাঁচিল টপকে নিহত কাশ্মীরি প্রতিবাদীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। ১৯৩১ সালে ১৩ জুলাই মহারাজা হরি সিংহের ডোগরা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন তাঁরা। ১৩ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের শীর্ষ নেতাদের শহিদদের সমাধিস্থল বা মাজার-ই-শুহাদা পরিদর্শনে যেতে বাধা দেওয়ার একদিন পরই মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপ নিলেন।
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "গতকাল এখানে ফতিহা পড়তে দেওয়া হয়নি। মানুষকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। যখন গেট খুলে দেওয়া হয়, আমি কন্ট্রোল রুমকে জানাই যে আমি এখানে আসতে চাই, তখন আমার গেটের সামনে একটি বাঙ্কার রাখা হয় এবং গভীর রাত পর্যন্ত তা সরানো হয়নি। আজ আমি তাঁদের কিছু বলিনি। ওদের কিছু না বলেই আমি গাড়িতে উঠে বসলাম (এখানে গাড়িতে চেপে চলে আসি)।" তাঁর সংযোজন, "ওরা কীরম নির্লজ্জ দেখো। আজও ওরা আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল। আমরা নৌহাট্টা চকে গাড়ি পার্ক করি। তারা আমাদের সামনে একটি বাঙ্কার রেখে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল। এই পোশাক পরা পুলিশরা মাঝে মাঝে আইন ভুলে যায়। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আজ তারা কোন আইনের অধীনে আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল ? নিষেধাজ্ঞা গতকালের জন্য ছিল। ওরা বলে যে এটি একটি স্বাধীন দেশ, কিন্তু কখনও কখনও ওরা মনে করে যে আমরা তাদের দাস। আমরা কারও দাস নই। যদি আমরা দাস হই, আমরা জনগণের দাস।" উপত্যকার নিরাপত্তাবাহিনীকে টার্গেট করে এমনই মন্তব্য করেন তিনি। এই বাহিনী লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। NC নেতার কথায়, "ওরা আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল। আমাদের পতাকা ছেঁড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।"
শ্রীনগরে শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শনে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য গতকাল মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিধায়ক এবং বিরোধী নেতাদের তাঁদের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। ওমর আবদুল্লা গতকাল সন্ধেয় দিল্লি থেকে ফিরে এসে বলেন যে, এরপর তাঁকে "অবরুদ্ধ" করে রাখা হয়। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর করা একটি ভিডিও পোস্টে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ তাঁকে বেরোতে বাধা দিচ্ছে।
১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই কী হয়েছিল ?
১৩ জুলাই কাশ্মীরের ইতিহাসে একটি অন্য দিন। ১৯৩১ সালের এই দিনে, একদল কাশ্মীরি শ্রীনগর কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁরা আব্দুল কাদিরের সমর্থক ছিলেন, যিনি কাশ্মীরিদের ডোগরা শাসক হরি সিংয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ১৩ জুলাই, আব্দুল কাদিরকে যেখানে বন্দি রাখা হয়েছিল, সেই কারাগারের বাইরে বিক্ষোভকারীদের একটি বিশাল দল জড়ো হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হয়ে, মহারাজার বাহিনী গুলি চালায়, যার ফলে ২২ জন নিহত হন। ১৩ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ড ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত করে এবং ডোগরা শাসক এবং ব্রিটিশদের উপত্যকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে বাধ্য করে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনও ১৩ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের একটি রাজনৈতিক পরিণতি ছিল। এই নির্বাচন জম্মু ও কাশ্মীরে স্বৈরাচারী শাসনের পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনা করে। যদিও মহারাজার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ব্যাপক ক্ষমতা ছিল।
কী পাল্টেছে ?
এর আগে, প্রতি বছর ১৩ জুলাই পুলিশ শহিদ স্থলে গান স্যালুট দিত এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করত। রাজনৈতিক নেতারা ১৯৩১ সালে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতেন এবং জনসভা করতেন। কিন্তু ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে এবং রাজ্যকে দু'টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার পর থেকে, প্রশাসন এই শহিদ বেদিতে কোনও অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে।