তিরুঅনন্তপুরম: কমলা হ্যারিসের জয়ের খবরে উচ্ছ্বাস তাঁর মায়ের গ্রামে। কোথাও পোস্টার লাগিয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে তো কোথাও রঙ্গোলি তৈরি করে, বাজি ফাটিয়ে কমলার জয়ের উৎসবে সামিল হন তামিলনাড়ুর থুলাসেন্দ্রাপুরম গ্রামের বাসিন্দারা।


দু’দশকের বেশি সময় ধরে সান ফ্রান্সিসকো এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল। এরপর ক্যালিফোর্নিয়া থেকেই মার্কিন সেনেটর। অবশেষে আমেরিকার প্রথম মহিলা হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে জয় কমলা হ্যারিসের।





১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ কমলা হ্যারিসের। বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ছিলেন জামাইকান এবং মা শ্যামলা গোপালন ভারতীয়। বাল্যকালেই তাঁর বাবা-মার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর থেকে মা-র কাছেই বেড়ে ওঠা কমলা হ্যারিসের।

তামিলনাড়ুর তিরুভারুর জেলার থুলাসেন্দ্রাপুরম গ্রামে বসবাস ছিল কমলার পরিবারের। কমলার ছোট মাসি সরলা গোপালন এখনও চেন্নাইতেই থাকেন। শনিবার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে জেতার পর উচ্ছাস দেখা গিয়েছে সেখানেও।


কমলা হ্যারিসের জয়ের পর এদিন তাঁর মামা জি বালাচন্দ্রণ বলেন, আমি জানতাম ও জিতবে। তাই চিন্তা হয়নি। চাইছিলাম, যাতে যত তাড়াতাড়ি ফল ঘোষণা হোক। আর তা দেখে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যাই।





মা এবং মাসির প্রভাব কমলা হ্যারিসের ওপর প্রথম থেকেই বেশি ছিল। এমনকি নিজের নির্বাচনী ভাষণেও একাধিকবার তাঁর মুখে উঠে এসেছে ছোট মাসি সরলা গোপালনের কথা।

তবে কমলার জয়ের পথ ততটা মসৃণ ছিল না। প্রথমে ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন কমলা হ্যারিস।
সেই সময় জো বাইডেনের সঙ্গে তাঁর তুমুল বিতর্ক হয়।


শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করে ডেমোক্র্যাটরা। পরে কমলাকে ‘রানিং মেট’ বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করে নির্বাচনী যুদ্ধে নামেন বাইডেন।


কিন্তু জো বাইডেনের মতোই কমলা হ্যারিসকেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। এমনকি কমলা হ্যারিস সম্পর্কে নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প এও বলেন, মানুষ ওঁকে (কমলা হ্যারিসকে) পছন্দ করেন না। কেউ পছন্দ করেন না। উনি কখনও আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। উনি নির্বাচিত হলে সেটা হবে ‘আমেরিকার অপমান’।


কিন্তু শুরু থেকে দমে না গিয়ে চোখে চোখ রেখে পাল্টা দিয়ে গিয়েছেন কমলা। অর্থনীতি থেকে করোনা সংক্রমণ, সব বিষয়ে তীক্ষ্ণ আক্রমণ শাণিয়েছেন ট্রাম্পকে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ট্রাম্পের গলায় যখন আশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে, তখন কমলা হ্যারিস পাল্টা বলেছেন, চিকিৎসকদের আশ্বাস পেলে তবেই প্রতিষেধক নেব আমি। প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য লাইনের সামনেই থাকব। কিন্তু শুধুমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় প্রতিষেধক নিতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।


ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় ইন্ডিয়ান-আমেরিকানদের মধ্যে প্রথম থেকেই জনপ্রিয় ছিলেন কমলা। এশীয় হওয়ায় তাঁকে অনেকে ‘লেডি ওবামা’ও বলতেন। তবে কালো চামড়ার হওয়ায় অনেক কটাক্ষও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।


২০১৪ সালে পেশায় আইনজীবী ডগলাস এমহফকে বিয়ে করেন কমলা। কমলার জয়ের নেপথ্যে তাঁর অবদানও কম নয়। নির্বাচনের আগে নিজের পেশা ছেড়ে স্ত্রীর প্রচারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন ডগলাস।


অবশেষে কঠিন জয় এল শনিবার। জয়ের পর কমলাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, আপনার সাফল্য বেনজির। ইন্দো-আমেরিকানদের কাছে গর্বের বিষয়।