বাগেশ্বর: দেবভূমিতে বিভীষিকা ফিরে এল আবারও। জোশীমঠের পর এবার বাগেশ্বরে পর পর বাড়িতে ফাটল। ভূমির অবনমনকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে এই পরিস্থিতির জন্য, পাশাপাশি, নির্বিচারে খননকার্য চালানোর ফলেও মাটি ক্রমশ বসে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র বসতবাড়িই নয়, মন্দির, রাস্তাঘাট, মাঠ-ময়দান, সবক্ষেত্রেই মারাত্মক ক্ষতি চোখে পড়ছে। (Bageshwar Land Subsidence)


কুমায়ুনের অন্তর্গত বাগেশ্বর জেলার কান্দা এলাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর। ২০০-র বেশি বাড়িতে ফাটল ধরেছে, সেগুলি হেলে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।  উত্তরাখণ্ড বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জেলার ১১টি গ্রাম এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে। ৪৫০টি বাড়িকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে এখনও পর্যন্ত। (Bageshwar Mining Effects)


এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি সাজিমাটি তুলতে এলাকায় ব্যাপক খননকার্য চলছে।  বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলছে খনখনকার্য। খোঁড়াখুঁড়ির পর গর্ত বোজানোও হচ্ছে না ঠিক ভাবে। সেই আবহে বৃষ্টি হচ্ছে যখন, ধসে যাচ্ছে মাটি। অবনমন ঘটছে ভূমির। বার বার সেই নিয়ে অভিযোগ জানালেও প্রশাসন নিরুত্তাপ বলে দাবি স্থানীয়দের।


কুওয়ারি এবং সেরি গ্রামের প্রায় ১৩১টি পরিবার ধসে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাজিমাটি খনির কাছে বসবাস যাঁদের, সেখানেও মাটি বসে গিয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে বাড়িঘরে।  কান্দা এবং রীমা উপত্যকায় মাঠঘাট, রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৭০টি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে সেখানে। গ্রামবাসীদের অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। 


ব্যাপক খননকার্যের জেরে ১০০০ বাজার পুরনো কালিকা মন্দিরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মন্দিরের মেঝেয় ফাটল ধরেছে। ওই মন্দির থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরত্বেই চুনাপাথরের খনি রয়েছে। সেখানে ব্যাপক খননকার্যের জেরেই মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। মন্দির কমিটির প্রেসিডেন্ট রঘুবীর সিংহ মজিলা জানিয়েছেন, এই মন্দির শুধু ধর্মস্থান নয়। মন্দিরকে ঘিরে এলাকার অর্থনীতিও গড়ে উঠেছে। সমাজকর্মী সুরেশ সিংহ মজিলা জানিয়েছেন, কৃষিকার্য এবং ধর্মীয় পর্যটনকে কেন্দ্র করেই পেট চালান স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু নির্বিচারে যেভাবে খননকার্য চলছে, তাতে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হতে বসেছে।


বাগেশ্বর জেলা সাজিমাটির জন্য পরিচিত। সেখানে ১৩০টিরও বেশি খনি রয়েছে। কাগজ, রং, প্রসাধনী কারখানাগুলিতে সেখান থেকেই সাজিমাটি যায়। কিন্তু নির্বিচারে খননকার্য চালানোয় বিপদ নেমে এসেছে। এমনিতেই বাগেশ্বর জেলা দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৩ সালে ভয়ঙ্কর ভূমিধসে সেখানে বহু মানুষ মারা যান। ২০১০ সালেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন চাইছেন স্থানীয়রা।