নয়াদিল্লি: দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ ভেসে এসেছে জলের নীচ থেকে। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি টাইটানিক দর্শনে যাওয়া ডুবোজাহাজের (Titanic Wreckage)। আর মাত্র ১০ ঘণ্টার চলার মতো অক্সিজেন বেঁচে রয়েছে ওই ডুবোজাহাজটিতে। তার মধ্যে খোঁজ না মিললে আর কোমও আশা থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা (Titanic Expedition)।
বুধবারও জলের নীচ থেকে দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ কানে এসেছে। সেটি ওই ডুবোজাহাজ থেকেই এসেছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখছে আমেরিকার নৌবাহিনী। আটলান্টিক মহাসাগরের যে জায়গা থেকে ওই ডুবোজাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তার বাইরেও আরও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। রাতভর কার্যত খুঁড়ে ফেলা হচ্ছে আটলান্টিক। কিন্তু কোথাও দেখা নেই ডুবোজাহাজটির।
ডুবোজাহাজটির খোঁজে আরও জলযান নামানো হচ্ছে বৃহস্পতিবার। উদ্ধারকার্য চালাতে যোগ দিয়েছে আমেরিকার উপকূল বাহিনী, কানাডার বায়ুসেনার বিমান, ফ্রান্সের নৌবাহিনীও। এ ছাড়াও নামানো হয়েছে রোবটচালিত যান। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, আর ১০ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন বেঁচে রয়েছে ডুবোজাহাজটিতে।
১০০ বছরের বেশি সময় আগে আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে যায় বিশ্ববিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ। কিন্তু আজও টাইটানিক নিয়ে মেটেনি কৌতূহল। গাঁট থেকে মোটা টাকা খরচ করে সেই ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুষ করতেও ছুটে যান মানুষ জন। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পৃথক পর্যটন শিল্পও। কিন্তু সেই টাইটানিক দর্শন ঘিরেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
ওশিয়ান গেট এক্সপেডিশন নামের একটি সংস্থার তরফে এই মহাসাগরের নীচে পর্যটন ব্যবসা চালানো হয়। রবিবার পর্যটকদের নিয়ে আটলান্টিকে নেমেছিল তাদের একটি ডুবোজাহাজ 'টাইটান সাবমার্সিবল'। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি পৌঁছতে আট ঘণ্টা সময় লাগার কথা ছিল। কিন্তু মহাসাগরের জল ছোঁয়ার ৪৫ মিনিট পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডুবোজাহাজটির সঙ্গে।
আন্তর্জতিক সংবদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নিখোঁজ ওই ডুবোজাহাজে সওয়ার ছিলেন ব্রিটেনের ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং। যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থা 'অ্যাকশন এভিয়েশনে'র চেয়ারম্যান তিনি। গভীর সমুদ্রে যাওয়ার নেশা ছিল তাঁর। সপ্তাহান্তে সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপটেডও দিয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, টাইটানিক দর্শনের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন তিনি। এবছর প্রথম তিনিই টাইটানিক দর্শনে যাচ্ছেন বলেও জানান। ডুবোজাহাজের সঙ্গে নিখোঁজ তিনিও।
এ ছাড়াও ডুবোজাহাজটিতে সওয়ার রয়েছেন পাকিস্তানের ধনকুবের শাহজাদা দাউদ, তাঁর ছেলে সুলেমান, প্রাক্তন ফরাসি ডুবুরি পল হেনরি নারজিওলেত এবং ওশিয়ানগেট সংস্থার সিইও স্টকটন রাশ। তাঁদের নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে পড়ে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে রওনা দেয় 'টাইটান সাবমার্সিবল' ডুবোজাহাজটি। সেটির দৈর্ঘ্য ২২ ফুট। ওজন ১০ হাজার ৪৩২ কেজি। একটানা ৯৬ ঘণ্টা পাঁচ সওয়ারিকে নিয়ে রওনা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাতে চেপে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দর্শন, এবং গভীর সমুদ্রে বিচরণ করতে খরচ পড়ে মোটা টাকা, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি।