কলকাতা: কাঁকুড়গাছিতে অভিজাত আবাসনে জোড়া মত্যুর ঘটনায়। শাশুড়িকে খুন করার অভিযোগে অভিযুক্ত জামাই। খুনের পর আত্মঘাতী হয় জামাই। সেই ঘটনা কার্যত নড়িয়ে দেয় পুলিশকে। কেন খুন ? সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন? ছেলের সামনেই কি মাকে খুন? অস্ত্র এল কোত্থেকে?


প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে নানা তথ্য। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার অভিযুক্ত জামাই অমিত অগ্রবাল শ্বশুরবাড়িতে আসে। কিছুক্ষণ পরেই শ্বশুর ও শাশুড়ির সঙ্গে তার বচসা শুরু হয়। এরপরই শাশুড়িকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় অভিযুক্ত। শ্বশুরকে লক্ষ্য করেও গুলি চালায় সে। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় রক্ষা পান তিনি। এরপর অভিযুক্ত আত্মঘাতী হন।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ সূত্রে খবর, অমিত অগ্রবালের সুইসাইড নোট থেকে মিলেছে শ্বশুর-শাশুড়ি সহ তিনজনের নাম। সেখানে শ্বশুরবাড়ির প্রতি অমিতের রাগ, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সন্তানের সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য শ্বশুরবাড়ির সদস্যদেরই দায়ী করেন তিনি। পাশাপাশি, বেঙ্গালুরুর হোয়াইট ফিল্ডের অভিজাত আবাসনে অমিতের স্ত্রী শিল্পীর মৃতদেহের পাশ থেকেও উদ্ধার হয়েছে একই ধরনের একটি নোট। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি সম্ভবত বেআইনি। সন্তানকে বেলঘরিয়ায় দাদার বাড়িতে রেখে আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে কাঁকুড়গাছিতে শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হন অমিত।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, শনিবার বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীর ফ্ল্যাটে যায় অমিত। ঢুকতে না পারায়, রবিবার জোর করেই ফ্ল্যাটে ঢোকে। শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে খুন করে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। ছেলের সামনেই খুন কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ১০ বছরের ছেলেকে বারবার জিগ্যেস করা হলেও তেমন কোনও সদুত্তর মেলেনি বলেই সূত্রের খবর।

পুলিশ সূত্রে খবর, ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় অমিত অগ্রবাল ও শিল্পী ঢনঢনিয়ার। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দম্পতি থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। ২ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা রুজু হওয়ার পর, হুগলির উত্তরপাড়ার বাড়িতে চলে আসেন অমিত। তবে মাঝেমধ্যেই মামলার শুনানির জন্য যেতেন বেঙ্গালুরুতে। এবার মামলার শুনানি নাকি, স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করে সেখানে যান, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

বোর্ডিং পাসের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে গতকাল দুপুর ৩টেয় কলকাতায় পৌঁছন অমিত। ছেলেকে বেলঘরিয়ায় দাদার বাড়িতে রেখে, বিকেল ৫টার পর যান কাঁকুড়গাছির শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে বাদানুবাদ চলাকালীন সেভেন এম এম পিস্তল থেকে গুলি চালিয়ে শাশুড়িকে খুন করেন, আত্মঘাতী হন। শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নোটটি কখন লেখা হয়, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ, নাকি সম্পর্কের টানাপোড়েনের জের, কী কারণে স্ত্রী ও শাশুড়িকে খুন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কাঁকুড়গাছির শ্বশুরবাড়িতে অমিতের ল্যাপটপ ব্যাগ থেকে মিলেছে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন। এটা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, খুনের পরিকল্পনা করেই শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অমিত। পুলিশ সূত্রে খবর, শাশুড়িকে তাক করে প্রথমবার অমিতের ফলস্ ফায়ারিং। দ্বিতীয় গুলি দরজায় লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তৃতীয় গুলির পর অমিতের শাশুড়ি ললিতা ঢলঢনিয়া রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন।