করাচি: ভূমিকম্পে যখন যায় যায় অবস্থা, সেই সময়ই তাণ্ডব চালাল জেলবন্দি কয়েদিরা। বন্দিদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন জেলের আধিকারিকরা। সেই সুযোগেই জেল ভেঙে চম্পট দিল ২০০-র বেশি অপরাধী, যাদের অনেকে গুরুতর অপরাধে যুক্ত ছিলেন। শুধু তাই নয়, জেলে ভিতর তাণ্ডবও চলল। মারপিট, ধস্তাধস্তি থেকে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে গেল। এমনকি জেলের মধ্যে চলল গুলিও। সংঘর্ষে এক কয়েদির মৃত্য়ু হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন তিন অফিসার এবং এক নিরাপত্তারক্ষীও। (Karachi Prison Break)
সোমবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে করাচির মালির জেলে। সোমবার রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পাকিস্তান। মাটি কেঁপে ওঠায় আতঙ্ক ছড়ায় ওই জেলা কারাগারেও। জানা যায়, কম্পনের উৎসস্থল মালিরের দক্ষিণ-পূর্বে, মাটির ১০ কিলোমিটার নীচে। এমন পরিস্থিতিতে জেলবন্দি কয়েদিদের নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া হয়। ৭০০-১০০০ কয়েদিকে পৃথক পৃথক কুঠুরি থেকে বের করে এনে মূল ফটকের কাছে জড়ো করেন জেল কর্তৃপক্ষ। (Pakistan News)
এই ভিড়েরই সুযোগ নেয় কিছু কয়েদি। জানা গিয়েছে, শতাধিক কয়েদি মূল ফটকের উপর কার্যত আছড়ে পড়ে। গায়ের জোরে ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে তারা। বাধা দিতে গেলে জেলের রক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয় এবং কয়েদিরা গুলিও ছোড়ে বলে জানা গিয়েছে। কয়েদিদের মধ্যেও হাতাহাতি, মারামারি শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনায় এক বন্দি মারা গিয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ফ্রন্টিয়ার কর্পসের তিন অফিসার ও এক নিরাপত্তা রক্ষী। এর পর জেলের মূল ফটক দিয়েই সবমিলিয়ে ২১৬ কয়েদি পালিয়ে যায় বলে জানা যাচ্ছে।
সিন্ধের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লঞ্জর যদিও গোটা ঘটনায় সাফাই দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বন্দিরা ফটক বা দেওয়াল ভেঙে পালায়নি। ভূমিকম্পে দেওয়ালে ফাটল ধরলেও, তা ভাঙতে পারেনি বন্দিরা। বরং মূল ফটক টপকে পালায় তারা। রক্ষীদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে তারা। জেলের অন্দরে যখন হুলস্থুল কাণ্ড, সেই সময় পালায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, জেল ভেঙে কয়েদিরা পালিয়েছে জানাজানি হতেই শহরে উচ্চ সতর্কতা জারি হয়। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান, তাতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৭৫ জন কয়েদির নাগাল মিলেছে। বাকিরা এখনও অধরা। সোশ্য়াল মিডিয়ায় এমন একাধিক ভিডিও সামনে এসেছে, যেখানে জেল পালানো কয়েদিরা করাচির রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছে, দশকের পর দশক তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল জেলে। শোনা গিয়েছে গুলির শব্দও। ওই ভিডিও-র সত্য়তা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ।
এই মুহূর্তে করাচিতে কার্যত চিরুণি তল্লাশি চলছে। পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের খোঁজ চলছে। পাশাপাশি, এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। সরকারের তরফে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।