Pahalgam Incident: পহেলগাঁও হামলায় ২৫ জন হিন্দু পর্যটকের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছেন এক স্থানীয় কাশ্মীরি যুবক। সৈয়দ আদিল হুসেন। পেশায় টাট্টু ঘোড়ার চালক। নিজের টাট্টু ঘোড়ায় চড়িয়ে বৈসারন উপত্যকায় পর্যটকদের নিয়ে যেতেন তিনি। অন্যান্য দিনের মতোই ২২ এপ্রিলও পর্যটকদের নিয়েই বৈসারন গিয়েছিলেন আদিল। আচমকাই জঙ্গিদের মুখোমুখি হয়ে যান। জঙ্গিদের গুলি চালাতে দেখে চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন করেন, কেন তারা এভাবে গুলি চালাচ্ছে? পর্যটকদের বাঁচাতে জঙ্গিদের হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিতে গিয়েছিল আদিল। তখনই শেষ হয়ে যায় সে। বুকে পরপর তিনটি গুলি লাগে আদিলের। 

তবে শুধু আদিল নন, তাঁর এক তুতো ভাই নজাকত আহমেদ শাহ-ও দারুণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ১১ জন পর্যটকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। তাদের মধ্যে রয়েছে তিনজন শিশুও। ২৮ বছরের নজাকত আহমেদ শাহ চারজন দম্পতি এবং শিশুদের ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল বৈসারন। এই পর্যটকদের 'লাস্ট ডেস্টিনেশন' ছিল পহেলগাঁওয়ের 'মিনি সুইৎজারল্যান্ড'। বৈসারন উপত্যকা ছেড়ে ফেরার ঠিক আগের মুহূর্তেই গুলি চলার আওয়াজ শুনতে পান নজাকত। দু'জন বাচ্চাকে নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন তিনি। 

নজাকত জানিয়েছেন, 'আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল পর্যটকদের পরিবারের নিরাপত্তা। বাচ্চাদের নিয়ে আমি মাটিতে শুয়ে পড়েছিল। এলাকাটা কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল। তাই পালানো সহজ ছিল না। একটা ছোট্ট ফাঁকা জায়গা দেখতে পেয়েছিলাম আমি। সেখান দিয়েও ওদের বেরিয়ে যেতে বলি। ওরা বলেছিল বাচ্চাদের আগে বাঁচাতে। দু'জন বাচ্চাকে নিয়ে আমি ওই ফাঁকা দিয়ে বেরিয়ে পহেলগাঁওয়ের দিকে দৌড়তে থাকি। আল্লাহকে ধন্যবাদ যে ওই ১১ জন অতিথিকে নিরাপদে পহেলগাঁওতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম।' বাচ্চাদের নিরাপদ স্থানে রেখে আবার বৈসারনে ফিরে এসেছিল নজাকত। নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বাকি পর্যটকদের। 

২০১৯ সালের পুলওয়ামার পর ঘটনার পর আর এত বড় নাশকতা দেখেছি কাশ্মীর। এবার ভূস্বর্গের পহেলগাঁওয়ের হামলা ফুঁসছে গোটা দেশ। তবে হামলার দিন টাট্টু ঘোড়ার চালক, ক্যাব চালক, ট্যুরিস্ট গাইড - এঁরাই উদ্ধার করেছেন পর্যটকদের অনেককে। বৈসারনের জঙ্গি হামলা থেকে যাঁরা ফিরে এসেছেন, সকলেই বলছেন, 'ঈশ্বর দূত পাঠিয়েছিলেন।' মহারাষ্ট্রের আশাবরী জগদলে। পহেলগাঁও হামলায় জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তাঁর বাবা এবং কাকা। তবে আশাবরী জানিয়েছেন, তিনি, তাঁর মা এবং কাকিমা নিরাপদে ওই এলাকা ছেড়ে বেরোতে পেরেছেন এক ঘোড়া চালকের সাহায্যে। সেই ঘোড়া চালকই তাঁদের পৌঁছে দেয় ক্যাবের কাছে। বাকি রাস্তায় সাহায্য করেছেন ওই ক্যাব চালক। এমনকি শ্রীনগর ছাড়ার পরেও যোগাযোগ রেখেছেন। টাকাপয়সা থেকে শুরু করে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। ফোনে কান্নাকাটিও করেছেন ওই ক্যাব চালক। আশাবরীর বাবা এবং কাকার মৃত্যুর জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছেন মন থেকে।