চণ্ডীগড়: শয়ে শয়ে পুলিশ,আধা সেনা মোতায়েন। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, চূড়ান্ত তৎপরতা। তার পর দীর্ঘ পথ ধাওয়া সশস্ত্র পুলিশের। তার পরও পঞ্জাবের খালিস্তানপন্থী, বিচ্ছিন্নতাকামী অমৃতপাল সিংহ অধরাই। বরং গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁকে ঘিরে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রথমে জানা যায়, ধাওয়া করে তাঁকে একটি বাড়িতে গিয়ে ফেলা গিয়েছে। তার পর জানা যায়, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। কিন্তু পরে জানা যায়, অমৃতপালের ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু কনভয় থামিয়ে যেই না অমৃতপালকে গ্রেফতার করতে যায় সশস্ত্র পুলিশ, তাদের হাত ছাড়িয়ে গাড়িতে চেপে  চম্পট দেন অমৃতপাল। এই মুহূর্তে পুলিশের খাতায় ফেরার তিনি।


অমৃতপালকে ঘিরে শনিবার দিনভর থমথমে পরিবেশ ছিল পঞ্জাবে।  জলন্ধরের শাহকোট তেহসিলের উদ্দেশে গাড়িতে চেপে রওনা দিয়েছিলেন অমৃতপাল। সেই অবস্থায় তাঁকে ধাওয়া করে পুলিশ। প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ মেশ মেহতপুরে এনে ফেলা হয় অমৃতপালকে। গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলে পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় শাহকোটমুখী সব রাস্তা। তার পর অমৃতপালের সহযোগীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রচুর বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে খবর। কিন্তু একটি গাড়ি বাগিয়ে অমৃতপাল পুলিশের হাত ফস্কে চম্পট দিতে সফল হয় বলে জানা গিয়েছে।


অমৃতপাল চম্পট দেওয়ার পর পঞ্জাব পুলিশের তরফে তাঁকে ফেরার ঘোষণা করা হয়েছে। অমৃতপালের জন্মভূমি জাল্লু খেড়া গ্রামকে মুড়ে ফেলা হয়েছে সশস্ত্র পুলিশ এবং আধা সেনা দিয়ে। পঞ্জাবের একাধিক জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে পঞ্জাব-সহ হিমাচলপ্রদেশেও। হাত  ফস্কে চম্পট দিলেও, অমৃতপালকে শীঘ্রই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পঞ্জাব পুলিশ। অমৃতপাল এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। পঞ্জাব পুলিশ এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স পঞ্জাব জুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু এত কড়া নিরাপত্তা, প্রস্তুতি সত্ত্বেও কী ভাবে হাত ফস্কে পালালেন অমৃতপাল, উঠছে প্রশ্ন।


অমৃতপাল যে গাড়িতে চেপে পালিয়েছিলেন, সেটি পুলিশ উদ্ধার করতে পেরেছে। তার মধ্য়ে থেকে ৩১৫ বোর পিস্তল, তলোয়ার, ওয়াকি-টকি উদ্ধার হয়েছে। গাড়িটি উদ্ধার হয় জলন্ধরের সালিমা গ্রাম থেকে। শনিবার থেকে পর পর এই ঘটনাবলীর জেরে এই মুহূর্তে পঞ্জাবের পরিস্থিতি অত্যন্ত থমথমে। সোমবার পর্যন্ত গোটা পঞ্জাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ব্যাঙ্ক লেনদেন ছাড়া সমস্ত SMS পরিষেবাও বন্ধ থাকবে। এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য ডঙ্গল পরিষেবাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জনস্বার্থে। অমৃতপালের মামলা কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA-র হাতে তুলে দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।


খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাকামী নেতা তথা স্বঘোষিত শিখ ধর্মগুরু অমৃতপাল। 'ওয়ারিস পঞ্জাব দে' নামের একটি চরমপন্থী  সংগঠনও চালান অমৃতপাল। অভিনেতা তথা সমাজকর্মী দীপ সিধু ওি সংগঠনের সূচনা করেন। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দীপের। তার পর থেকে অমৃতপালের হাতেই সংগঠনের রাশ। বিগত কিছু দিন ধরে তিনি পঞ্জাবকে তাতিয়ে তুলছিলেন বলে অভিযোগ। 


এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পঞ্জাবের পরিস্থিতি উত্তাল হয়েছিল। অমৃতপালের সহযোগী, অপহরণকাণ্ডে অভিযুক্ত লভপ্রীত সিংহে গ্রেফতারিতে প্রতিবাদ, আন্দোলন শুরু হয়। তাতেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অমৃতপাল। তাঁর অনুগামীরা তলোয়ার, বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নামেন। ব্যারিকেড ভেঙে ঞ্জলায় একটি থানাতেও ঢুকে পড়েন তাঁরা। লক্ষপ্রীতের মুক্তির আশ্বাস আদায় করেন পুলিশের কাছ থেকে। তাতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। ছয় পুলিশকর্মী, পুলিশের একজন সুপারিন্টেন্ডেন্টও আহত হন।