লন্ডন: জন্মসূত্রে রাজা হওয়া একেবারে বাঁধাধরা ছিল। কিন্তু ব্রিটেনের রাজা হতে সাত বসন্ত পার হয়ে গেল তৃতীয় চার্লসের (King Charles Coronation)। শনিবার ব্রিটেনের রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যাভিষেক হল তাঁর। পাশাপাশি ‘কুইন কনসর্ট’ (রানি না হয়েও রানি) হিসেবে মাথায় মুকুট পরলেন তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা।  আর তাতেই কথায়, লেখায়, স্মৃতিতে বার বার ফিরে আসছে, রাজা চার্লসের প্রাক্তন স্ত্রী, প্রয়াত ডায়ানা উল্লেখ। কী হতো, কী হতে পারত, নিজের মতো করেই তত্ত্ব সাজাচ্ছেন ডায়ানার অনুরাগীরা (Remembering Diana)।


রাজ পরিবারের জন্ম। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠপুত্র। সেই সুবাদে ব্রিটেনের রাজা হওয়া লেখাই ছিল চার্লসের ভাগ্য়লিপিতে। একসময় বিশ্বের ‘মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর’ হিসেবে অভিহিত হতেন তিনি। সদ্য কৈশোর পেরনো  ডায়ানার সঙ্গে বিবাহের পরও সেই সমকীরণ পাল্টায়নি। বরং দুই সন্তান, হাসিখুশি পরিবারকে সামনে রেখে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছিলেন চার্লস।


কিন্তু ডায়ানার সম্পর্কে দাম্পত্যে যত চিড় ধরতে শুরু করে, ততই ব্রিটেনের সাধারণ নাগরিকের মনে চার্লসে নিয়ে সন্দেহের মেঘ জমতে শুরু করে। শোনা যায়, বিয়ের আগে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন চার্লস। বিবাহিতা ক্যামিলার সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল তাঁর। ডায়ানার সঙ্গে দাম্পত্যের শুরুতে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন চার্লস। কিন্তু ডায়ানার জনপ্রিয়তা ঢেকে দিতে শুরু করে চার্লসকে। তাঁদের বিবাহিত জীবনেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। তাতেই ফের ক্যামিলার সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক বাঁচিয়ে তোলেন চার্লস।


আরও পড়ুন: King Charles Coronation: বাইবেল পাঠ করলেন হিন্দু প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটেনে রাজ্যাভিষেক হল রাজা চার্লসের


চার্লস এবং ক্যামিলার সেই সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন ডায়ানাও। জানিয়েছিলেন, তাঁর বিয়ের পরও উপহার বিনিময়, দেখা-সাক্ষাৎ চালিয়ে যান চার্লস এবং ক্যামিলা। একবার সেই নিয়ে ক্যামিলাকে সাবধানও করতে যান তিনি। কিন্তু উল্টে তাঁকেই শাসানি দেন ক্যামিলা, যে হবু রাজার স্ত্রী, রাজপরিবারের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, বিলাসিতা, সবই রয়েছে ডায়ানার কাছে। সেই নিয়েই থাকুন ডায়ানা। চার্লসের উপর একার দখলদারি ছাড়তে হবে তাঁকে। ডায়ানার সেই বিখ্যাত উক্তি আজও সকলের কানে বাজে, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “তিন ব্যক্তির দাম্পত্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটু ভিড়ই ঠেকছিল।”


ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমেও সেই সময় চার্লস এবং ক্যামিলাকে নিয়ে মুখরোচক সব খবর সামনে আসতে শুরু করে। এমনকি ফোনে তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত বার্তালাপও ফাঁস হয়ে যায়। সেই আবহে ভারত সফরে তাজমহলের সামনে একাকী ডায়ানাকে বসে থাকতে দেখে চোখের জলে ভিজেছিলেন ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ।  চার্লস ক্যামিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্বীকার করে নেওয়ার পর আগুনে ঘি পড়ে কার্যত। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের উত্তরাধিকার হিসেবে চার্লসকে মানতে অস্বীকার করেন ব্রিটেনের সাধারণ নাগরিকরা।


সেই সময় একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, জনপ্রিয়তার নিরিখে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের উত্তরাধিকার হিসেবে চার্লসকে একেবারেই চাইছেন না সাধারণ মানুষ। বরং ডায়ানার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। এমনকি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর ডায়ানাকে রানি ঘোষণা করে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পক্ষেও ছিলেন অনেকে। কিন্তু ডায়ানা জানিয়ে দেন, রাজমুকুটে কোননও লোভ নেই তাঁর। মানুষের মনে জায়গা পেলেই হল।


এর পর টেমস দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের পর পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ডায়ানার। তার পিছনে রাজ পরিবারের হাতও দেখেছিলেন অনেকে। তার পর তরুণ দুই যুবরাজকে পাশে নিয়ে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন চার্লস।  যা ছিল ডায়ানার, তা ক্যামিলা ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে আজও ক্ষোভ পুষে রাখতে পারেন না অনেকেই। সেই ক্যামিলাই আজ ‘কুইন কনসর্ট’ হলেন। আর সব বিতর্ক, সমালোচনা পিছনে ফেলে ব্রিটেনে রাজ্যাভিষেক হল চার্লসের।