লন্ডন: দীর্ঘ প্রতীক্ষাপর্ব পেরিয়ে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক হল তৃতীয় চার্লসের (King Charles Coronation)। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন আগেই। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সিংহাসনে আরোহণ ঘটল। জমকালো অনুষ্ঠানে মাথায় উঠল রাজমুকট। বাইবেল পাঠ করে তাতে পৌরহিত্য করলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। চার্লসের রাজ্যাভিষেকের পাশাপাশি, এ দিন তাঁর স্ত্রী ক্যামিলার নামের পাশে সরকারি ভাবে 'কুইন কনসর্ট' শব্দবন্ধ জুড়ে গেল। তাঁরা মাথাতেও উঠল মুকুট, তবে চার্লসের মতো ততটা জৌলুসপূর্ণ ছিল না সেই পর্ব (King Charles)।
দীর্ঘ সাত দশকেরও পর ফের রাজ্যাভিষেকের সাক্ষী হল সমগ্র ব্রিটেন (Britain News)। প্রায় ১ হাজার বছর ধরে রাজতন্ত্রের এই প্রথা চলে আসছে সেখানে। সাবেকিয়ানার সব রীতিনীতি পিছনে ফেললেও, আজও রাজতন্ত্রকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি ব্রিটেন। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের তরফে মাঝেমধ্যেও ওজর-আপত্তি শোনা যায় বটে। তবে ইংল্যান্ড হাসিমুখেই রাজতন্ত্রকে বিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। তার জন্য নিজেদের করের টাকা ব্যয়েও আপত্তি নেই তাদের।
১৯৩৭ সালে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক হয়েছিল রাজা ষষ্ঠ জর্জের। তার পর চার্লসই প্রথম রাজা ব্রিটেনের। কারণ ১৯৫৩ সালে অভিষেকপর্ব থেকে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, মৃত্যু পর্যন্ত সিংহাসনে ছিলেন, ষষ্ঠ জর্জের কন্যা তথা চার্লসের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর মৃত্যুর পর, ৭৩ বছর বয়সে, রাজা হিসেবে ব্রিটেনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চার্লস। এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে সিংহাসনো আরোহণ ঘটল।
৭৪ বছর বয়সে চার্লসের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে উৎসবের আমেজ ব্রিটেন জুড়ে। দেশ-বিদেশের স্বনামধন্যরা হাজির হন সেখানে। প্রায় ৮ হাজার অতিথির সমাগম ঘটে। এ ছাড়াও রাস্তায় নেমে আসে জনসমুদ্র। টিভির পর্দায় চোখ আটকে ছিল সাধারণ নাগরিকদের। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে, কড়া নিরাপত্তায় মোড়া পরিস্থিতিতে এ দিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে পৌঁছন চার্লস এবং ক্যামিলা। রীতিনীতি মেনে শুরু হয় রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান।
তবে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসতে কম লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়নি চার্লসের। রানি এলিজাবেথ ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদি শাসক হলেও, তাঁর ছেলে চার্লস একেবারেই না পসন্দ ছিল ব্রিটেনবাসীর। বিশেষ করে, প্রয়াত ডায়ানার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যের টানোপোড়েন, ক্য়ামিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, বিবাহবিচ্ছেদ এবং সর্বোপরি ডায়ানার মৃত্যু, একসময় ব্রিটেনবাসীর কাছে খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন চার্লস। বৃদ্ধ বয়সে ক্যামিলার সঙ্গে বিবাহ নিয়েও বিদ্ধ হন সমালোচনায়।
শোনা যায়, ঢের আগেই ছেলেকে সিংহাসন ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কিন্তু চার্লসের ভাবমূর্তি নিয়ে ভীত ছিলেন তিনিও। রাজ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত ছিলেন। শেষ মেশ গত বছর তাঁর মৃত্যুর পরই রাজা হন চার্লস। তবে এখও বিতর্ক রয়েছে তাঁকে ঘিরে। সময়ের সঙ্গে তাঁর এবং ক্যামিলার সম্পর্ক ব্রিটেনবাসী মেনে নিলেও, ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগানের সঙ্গে সংঘাত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন চার্লস।