World Environment Day: 'অচেতন সমাজে সচেতন মানুষ'। বন্যায় প্রতি বছর ধ্বংস হচ্ছিল ব্রহ্মপুত্রের বন্যপ্রাণ। বিস্তর বালুচরে সবুজায়ন ঘটাতে তাই একাই নেমে পড়েন তিনি। অসমের ছেলে বুঝতে পারেন, পরিবেশ বাঁচিয়ে না রাখলে ধ্বংস হবে মানবসভ্যতা। সেই থেকে বালুচরে বনাঞ্চল গড়ার চেষ্টা। শেষে ৩০ বছরের অসাধ্য সাধনের ফল পেলেন অসমের 'অরণ্যমানব'।
Jadav Payeng: কে এই 'অরণ্যমানব' ?
অসমের এই অরণ্যমানবের নাম যাদব মোলাই পায়েং। একা হাতে বহ্মপুত্রের বালুচরে গড়ে তুলেছেন ১৩৬০ একরের বনাঞ্চল। পরিবেশকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করলেও এখন বিশ্ব তাঁকে 'ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া' বলেই চেনে। ইতিমধ্যেই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান। যাদবের এই অনন্য কাজের জন্য অসমের জোরহাট জেলার কোকিলামুখের সেই বনাঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছে 'মোলাই কাঠনিবাড়ি'।
World Environment Day: কোন ঘটনা বদলে দেয় সবকিছু
সালটা ছিল ১৯৭৯, যাদবের বয়স তখন ১৯। একবার অত্যধিক গরমে প্রচুর সাপ মারা যায় ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে। কাছের লোকেরা যাদবকে জানান, গাছ না থাকার কারণেই এই অবস্থা হচ্ছে পরিবেশের। বিষয়টা নিজেও বুঝতে পারেন তিনি। তবে অন্যান্যদের মতো বসে না থেকে বালুচরে বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা নেন 'অরণ্যমানব'। মাত্র ২০টি বাঁশের বীজ পুঁতে শুরু হয় কাজ। এরপর নিত্যদিন চলে দেখাশোনা। পরে বাঁশ বাড়তে দেখে আরও গাছের চারা আনেন যাদব।পরবর্তীকালে এই ছোট কর্মকাণ্ডই বড় বনাঞ্চলের রূপ পায়।
World Environment Day: সহজ ছিল না এই কাজ
তবে ফাঁকা বালুচরে বনাঞ্চল তৈরির কাজ খুব একটা সহজ ছিল না। বাড়ি থেকে কোকিলামুখ যাওয়াটাও ছিল বড় সমস্যা। প্রথমে ছোট নৌকায় চারা নিয়ে সবুজায়নে নেমে পড়েছিলেন যাদব। জলপথের পরে স্থলপথেও যেতে হত অনেকটা।তাই নৌকাতেই তুলে নিতেন সাইকেল। রাত তিনটের সময় প্রতিদিন উঠে পড়তেন নিয়ম করে। জলপথের যাত্রা শেষ করে সাইকেলে তাও দেড় কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হোতো রোজ।
Jadav Payeng: বাঘ, হাতি, গন্ডার কী নেই সেই বনাঞ্চলে ?
যাদবের গড়া এই বন এখন আশ্রয়স্থল হয়েছে রয়াল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, গণ্ডার ছাড়াও একশোরও বেশি হরিণ ও খরগোশের। যাদব জানিয়েছেন, শতাধিক হাতি বছরের ৬ মাসের বেশি সময় এই জঙ্গলেই সময় কাটায়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এখানেই দশের বেশি হস্তি শাবকের জন্ম দিয়েছে হাতিরা। এখানেই শেষ নয়, প্রচুর হনুমানের পাশাপাশি বড় পাখিরাও স্থায়ী বাসা বেঁধেছে এই জঙ্গলে।৩০০ একরের বাঁশের বনের সঙ্গে এখানে রয়েছে অনেক আয়ুর্বেদিক গাছ। অর্জুন, সেগুণ , কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও এখানে পাবেন অনেক ধরনের গাছ।
World Environment Day: বন দফতরও এখন নজর রাখে এই অরণ্যে
প্রথমে এত বড় কর্মকাণ্ডের হদিশ পায়নি অনেকেই। তবে ২০২৮ সালে সংবাদের শিরোনামে চলে আসে যাদবের তৈরি অরণ্য। সেবার প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের গ্রামে তাণ্ডব চালায় একটি হাতির পাল। গ্রামবাসীরা বন দফতরকে খবর দিতেই চলে আসে কর্মীরা। হাতিদের তাড়া করলে ওই অরণ্যে নজরে আসে বন দফতরের আধিকারিকদের। ফাঁকা বালুচরের জায়গায় বনাঞ্চল দেখে অবাক হন তাঁরাও।
কিছু বছর আগেও এই বনে হানা দেয় চোরাশিকারিরা। মূলত, অসমে এক শিংওয়ালা গন্ডার ছিল তাদের লক্ষ্য। তবে বিপদ আঁচ করে বন দফতরকে খবর দেন যাদব। সে যাত্রায় আর কিছু ক্ষতি করতে পারেনি চোরাশিকারিরা। ওই ঘটনার পর থেকেই পাকাপাকিভাবে বন দফতর নজর রাখে যাদব-অরণ্যে।
Jadav Payeng: বিদেশ থেকেও এসেছে ডাক
দেশের স্বীকৃতির পাশাপাশি এখন বিদেশ থেকেও ডাক আসছে ফরেস্ট ম্যানের। ইতিমধ্যেই দুবাই ও মেক্সিকো বনাঞ্চল গড়ার কাজ দিয়েছেন তাঁকে। একবার নিজেই দেখে এসেছেন দুই দেশের মাটি। এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে কাজ।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উষ্ণায়ণের প্রভাব বিচলিত করেছে অরণ্যমানবকে। তাই দেশ-বিদেশে গিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের বোঝাচ্ছেন পরিবেশের গুরুত্ব। কারণ যাদব জানেন, ছোটদের মনেই লালিত হয় বড়দের চেতনা। তাই বড়রা ভুলে গেলেও গাছেদের মনে রাখবে ছোটরা।
আরও পড়ুন : Gold Alert: পুরনো সোনার গয়নায় হলমার্ক না থাকলে বিক্রি করতে পারবেন না, করতেই হবে এই কাজ