বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: কথায় বলে, লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন! কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে রাজনৈতিক দলগুলির সেই গৌরী সেনরাই সঙ্কটে! কারণ, খুশি মতো আর টাকা যেমন ঢালতে পারবেন না, তেমনি কার কত টাকা কোন দলের ভাঁড়ার ভরিয়েছে, এবার তা জানতে পারবে সাধারণ মানুষ। গোপন কথাটি রবে না গোপনে! 


কী রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট?
রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ার জন্য নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প অসাংবিধানিক। ব্যাঙ্ক থেকে এই ধরনের বন্ড বিক্রি করা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যে সব নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond) এখনও ভাঙানো হয়নি তা, ১৫ দিনের মধ্যে অনুদানকারীকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বৃহস্পতিবার রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court Of India) প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে। সুপ্রিম-রায়ে ভোটের মুখে অস্বস্তি বাড়ল মোদি সরকারের। ধাক্কা খেল অনুদানগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলি। ভোটে কালো টাকার লেনদেন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয় ২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদি সরকার। কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে চাইলে, কিনতে হয় নির্বাচনী বন্ড। সেই বন্ড বিক্রির দায়িত্বে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। রাজনৈতিক দলগুলি বন্ড ভাঙিয়ে নিলেও কে, কত টাকা দিয়েছেন, তা বোঝা যেত না। উল্টে অনুদানকারীর জন্য মিলত ১০০ শতাংশ কর ছাড়ের সুবিধা। কিন্তু বন্ড চালু হওয়ার পর থেকেই বিষয়টির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক দলকে মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে গোপনে সুবিধা আদায় করছে অনুদানকারীরা। পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রাখা এই লেনদেনের বিরুদ্ধে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। ৫ বছর ধরে চলতে থাকা সেই মামলার রায় ঘোষণা হল বৃহস্পতিবার। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ট্যুইটার হ্যান্ডলে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী লেখেন, নতুন ভারতে ঘুষ ও অবৈধ কমিশনকে বলা হয় নির্বাচনী বন্ড। এদিন সেটি রিট্যুইট করে বিজেপির সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস। 


তথ্য কী বলছে?...
RTI সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,



  • ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ৯ হাজার ২০৮ কোটি টাকারও বেশি অনুদান পেয়েছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে।

  • প্রাপ্তির তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। এই সময়ে তারা একাই পেয়েছে ৫ বাজার ২৭২ কোটি টাকা। যা মোট অনুদানের ৫৭.২৫ শতাংশ। আর কংগ্রেস পেয়েছে ৯৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০.৩৩ শতাংশ।

  • তৃতীয় স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ঘাসফুল শিবিরের ভাঁড়ারে এসেছে ৭৬৭ কোটি টাকা। যা মোট অনুদানের ৮.৩২ শতাংশ।   

  • SBI-কে সুপ্রিম কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে যাঁরা নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন, ৬ মার্চের মধ্যে তাঁদের নাম ও বন্ড কেনার তারিখ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে। জমা দিতে হবে, যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান পেয়েছে তাদের বিস্তারিত বিবরণ। এই বিষয়ে দেশের নির্বাচন কমিশনকেও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশে বলা হয়েছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি যে অনুদান নিয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে ১৩ মার্চের মধ্যে। 


 


 


আরও পড়ুন:বাদ গেল ইন্দিরা গাঁধী, নার্গিসের নাম, পরিবর্তনের হাওয়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও