প্রকাশ সিনহা ও রুমা পাল, কলকাতা: বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ি, শান্তিনিকেতনে সিবিআই! 


কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, কয়লাকাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা-কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর ২টোর কিছু পরে কালীঘাটে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির হন ৫ সিবিআই আধিকারিক। কেন তৃণমূল সাংসদের স্ত্রীকে নোটিস? এই বিষয়ে সিবিআই সূত্রের দাবি,কয়লাকাণ্ডের তদন্তে একাধিক ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।সেই সূত্রেই অভিষেকের স্ত্রী রুজিরার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেনের তথ্য হাতে এসেছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।


টাকা কে পাঠিয়েছে? কোথা থেকে ট্রান্সফার হয়েছে? কেন হয়েছে? এই ব্যাপারে বিস্তারিত না জানালেও, সিবিআই সূত্রের দাবি, কয়লা পাচারের টাকা থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে জমা পড়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সিবিআই সূত্রের দাবি, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী-কে প্রশ্ন করতে চায় গোয়েন্দারা। 


সিবিআই সূত্রের দাবি, নোটিস দেওয়া হয়েছে সিআরপিসির ১৬০ ধারায়। জানানো হয়েছে, রুজিরাকে কয়লাকাণ্ডে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। 


তবে তাঁকে সিবিআই দফতরে তলব করা হচ্ছে না। বাড়িতেই মহিলা সিবিআই অফিসারদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান গোয়েন্দারা। রেকর্ড করতে চান তাঁর বয়ান। গত কয়েকমাস ধরেই গরু পাচারের পাশাপাশি কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে সক্রিয় সিবিআই। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বারবার তৃণমূলকে নিশানা করছে বিজেপি। 


শুভেন্দু অধিকারী এর আগে জানিয়েছিলেন, ‘‘কয়লা লালার টাকা কোথায় কোথায় যায়? থাইল্যান্ডে যায়, ব্যাঙ্ককে যায়, বোর্ড দেখাল - গত লোকসভা ভোটে কলকাতায় এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিলেন যিনি - তিনিই হলেন ম্যাডাম নারুলা ৷’’


ঠিক এর ৪ দিনের মাথায় শুভেন্দু অধিকারীর ঘরের মাঠ কাঁথিতে গিয়ে কড়া প্রত্যুত্তর দেন অভিষেক। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখন আবার আমার সঙ্গে না লড়াই করে আমার বৌকে টার্গেট করেছে, কী বলছে? বলছে আমার বৌয়ের নাকি এখানে অ্যাকাউন্ট আছে, ওখানে অ্যাকাউন্ট আছে। ভাই আমার বৌয়ের কলকাতা ছাড়া আর কোথাও অ্যাকাউন্ট নেই। আরে আমি তো সমস্ত তথ্য-পরিসংখ্যান সামনে রেখে দিয়েছি, কী বলছে, আমার বউ নাকি এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিল, তো এয়ারপোর্টে সিআইএসএফ কী নাকে নস্যি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল? ৫০০ সিসিটিভি আছে, ছবি প্রকাশ্যে আনছে না কেন?’’


বিধানসভা ভোটের মুখে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘‘অভিষেক অমিত শাহর বিরুদ্ধে মামলা করেছে, আগামিকাল, সোমবার কোর্টে অমিত শাহের হাজিরা দেওয়ার কথা, তার আগে কুৎসা করা হল, সিবিআইকে ব্যবহার করছে, এই লড়াই মাথা উঁচু করে জিতে আসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷’’


অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, ‘‘যখনই তদন্ত হয় তখন বলে পলিটিক্যাল ভেনডেটা, আর যখন তদন্ত বন্ধ থাকে তখন বলে মোদি-দিদি আঁতাঁত, আমরা চাই সত্য সামনে আসুক, আমরা কোনও সংস্থাকে চালাই না, এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, যারা বলছেন, ভুল বলছেন, সময় প্রমাণ করবে ৷’’


সিবিআই সূত্রের খবর, এদিন গোয়েন্দারা যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান, তখন বাড়িতে ছিলেন না রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নোটিসের সঙ্গে সঙ্গে ফোন নম্বর দিয়ে আসেন সিবিআই অফিসারেরা। রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি ফিরলেই ফোন করতে বলা হয়েছে।