ঋত্বিক মণ্ডল ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: নিউটাউনে এনকাউন্টারকাণ্ডের পর থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন অন্যান্য অনেক আবাসনের বাসিন্দারা। অভিযোগ, আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না নিয়ম। হচ্ছে না ঠিকমতো ভেরিফিকেশন। সিসি ক্যামেরা থাকলেও ঠিকমতো মনিটারিং হয় না বলেও অভিযোগ। এখনই এনিয়ে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।


পরপর গুলির শব্দে বুধবার কেঁপে উঠেছিল নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসন। এসটিএফ-এর রুদ্ধশ্বাস অভিযানে সেদিন মৃত্যু হয় আবাসনে গা ঢাকা দেওয়া পাঞ্জাবের কুখ্যাত ২ গ্যাংস্টারের। তদন্তে জানা যায়, ভুয়ো নথি দিয়ে সেই আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল দুই গ্যাংস্টার ও তাদের সহযোগীরা। আর এই ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তা অভাবে ভুগতে শুরু করেছেন শহরের একাধিক বড় আবাসনের বাসিন্দারা। সব জায়গাতেই দেখা দিচ্ছে ভাড়াটে-আতঙ্ক। নিউটাউনের ইস্টার্ন হাই-তে প্রায় ২০টি টাওয়ার রয়েছে। হাউজিং সোসাইটির সদস্যদের অভিযোগ, ভাড়া দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না।


নিউটাউনের ইস্টার্ন হাই হাউজিং সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে প্রথমে একজন সমস্ত নথি দিচ্ছে। পরে অন্য কারও শেয়ার করলে সেক্ষেত্রে অনেক সময়ই অন্য ব্যক্তির কোনও নথি মিলছে না। মহেশতলার হাইল্যান্ড গ্রিনে ৪৫টি টাওয়ারে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ফ্ল্যাট। কিন্তু মাত্র ৫০০টি ফ্ল্যাটে স্থায়ীভাবে বসবাস করে বাসিন্দারা। ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এখানেও নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ। ওই আবাসনের বাসিন্দা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় বলেন, একজন ভাড়া নিচ্ছে সে আবার একজনকে ভাড়া দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দেখছে না পুলিশ ভেরিফিকেশশন কখন হয় কখন ও হয়না। সিসিটিভি অর্ধেক কাজ করে না মনি টারিং হয়না। আরেক বাসিন্দা ডলি আচার্যের কথায়, এখানে কয়েকবার মধুচক্র ধরা পড়েছে। পুলিশ রেড করেছে। তারপরেও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। নিরাপত্তা থাকে না সব টাওয়ারে।


সুখবৃষ্টি আবাসনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, এখনই পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলেন, নিউটাউন ও বাইপাসে বিভিন্ন হাউজিং গড়ে উঠেছে। যেখানে হাসপাতল আইটি সেক্টরের চাকুরেরা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। হাউজিং কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সমন্বয়ের অভাব। এই কারণে এই আবাসনগুলি মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সাপুরজীর ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে আরও ভয়ঙ্কর হবে। এই পরিস্থিতিতে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার বিভিন্ন আবাসন ও হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শীঘ্রই নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে পুলিশ ও প্রশাসন।