কলকাতা: ইলিশের তেল দিয়ে গরম গরম ভাত। কখনও আবার সরষে ইলিশ। কখনও আবার বেগুন, কালো জিরে দিয়ে ইলিশের পাতলা ঝাল। স্বাদ বদলাতে ইলিশের বিরিয়ারি, খিচুরি ইলিশ মাছ ভাজা, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশের টক তো রয়েছেই। বাঙালির হেঁশেলে ইলিশের কদর চিরকাল। তবে চাহিদা থাকলেও এ বছর পর্যাপ্ত জোগান ছিল না।


ইলিশের ভরা মরসুমেও চড়া দামের কারণে রুপোলি শস্যের স্বাদ থেকে বঞ্চিতই থাকতে হয়েছে বাঙালিকে। খোকা ইলিশ দিয়ে দুধের স্বাদ খোলে মেটানোর মতো করেই ঢোক গিলেছে খাদ্যপ্রেমীরা। তবে সেই ইলিশে কি আর মন ভরে? এ হেন মন খারাপেই মরসুম কেটেছে যাঁদের, তাঁদের জন্য এবার সুখবর। ফের কলকাতায় আসছে বাংলাদেশি ইলিশ।


২০১২তে ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সরকার। ফলে আগের মতো পদ্মার ইলিশ এখন আর কলকাতায় মেলে না। গত বছর থেকে বাংলাদেশ সরকার পুজোর আগে ইলিশ রপ্তানিতে আংশিক ছাড় দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার উপহার হিসেবে ইলিশ পাঠিয়েছিল রাজ্যে। গত বছরের মতো এ বছরেও পুজোর উপহার হিসাবে বাংলাদেশি ইলিশ ঢুকেছে রাজ্যে। পুজোর আগেই কলকাতায় প্রায় ৪৬০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ।


সেই মতো গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতায় মাছ আমদানি করা হয়। কিন্তু গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ফের পদ্মা নদী থেকে ইলিশ মাছ ধরা এবং বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কলকাতার বাজারে মাছ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র ১১০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশমতো ৩৫০০ মেট্রিক টন রপ্তানি বাকি ছিল। এই পরিস্থিতিতে দু'দেশের মাছ ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আলাদাভাবে আবেদন জানান। 


গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফিশ ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বাংলাদেশ সরকারের কাছে বাকি মাছ পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এক নির্দেশ জারি করে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাকি ৩৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ এ দেশে রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশের এক্সপোর্টাররা।


এখানকার মাছ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন আগামী কয়েকদিনে ১০০০ থেকে ১১০০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ আমদানি হতে পারে। আগামিকাল থেকেই ফের হাওড়ায় ঢুকবে পদ্মার রুপালি শস্য। হাওড়া হোলসেল ফিস মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ইলিশের সাইজ অনুযায়ী দাম উঠতে পারে। ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম মাছের দাম থাকছে আনুমানিক ৯০০-১০০০ টাকা। ১ কিলো বা তার বেশি ওজনের মাছ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা হতে পারে। এ রাজ্যে বাংলাদেশি ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এই উৎসবের মরসুমে তাদের ভাল বিক্রি হবে।