কলকাতা : হালখাতা ... পঞ্জিকা .... নতুন প্রকাশিত বই আর থাক দেওয়া ক্যালেন্ডার। এই কয়েকমাস আগেও যে কোভিড আর আমফান এই জায়গাটাকে এক্কেবারে নিষ্প্রাণ করে দিয়েছিল আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তা বলবে কে। প্রচণ্ড আঘাত পেয়েও ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে বইপাড়া। 



আবারও চাঙ্গা বইপাড়া
হাল ফিরছে বাজারের। হাল ফিরছে ব্যবসার। দু-বছরের প্রাণহীনতা কাটিয়ে আবারও চাঙ্গা বইপাড়া। ফিরছে সেই চেনা ভিড়। চেনা হইচই। কিন্তু সেই লাইন কই হালখাতার দোকানের বাইরে। একটু একটু করে কোভিড কাঁটা কাটিয়ে উঠছে শহর। নববর্ষের আগে সেই ছবিই ধরা পড়ল এবিপি লাইভের ক্যামেরায়। এক সময় কলেজস্ট্রিট, বৈঠকখানা বাজারে হালখাতা কিনতে পড়ত মস্ত লাইন। মোটামুটি ভিড় সামলানোর জন্য লোক দরকার পড়ত। কিন্তু এখন সেই ভিড় নেই। বৈঠক খানা বাজার থেকে কলেজ স্ট্রিট, সব জায়গাতেই টুকটাক হালখাতা কেনার জন্য খদ্দেরদের আনাগোনা চলছে, কিন্তু লাইন নেই। 

নতুন আশা
কলেজস্ট্রিটের বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, গত বছর দুইয়ের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল হয়েছে।  পয়লা বৈশাখও অনেক দোকান খোলা থাকবে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা কোভিডকালে হালখাতা পুজোও তেমনভাবে করেননি অনেকে, ক্যালেন্ডার বিতরণের ঝক্কিও নিতে পারেননি আর্থিক ক্ষতি সামলে। তবে এবার আবার নতুন আশা নিয়ে বছর শুরু করছেন বাঙালি ব্যবসায়ীরা। থাকছে হালখাতার উদ্‌যাপনও। তাই এবার নানাবিধ হালখাতাও এসেছে বাজারে। 
আরও পড়ুন : 


' ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে সুস্থ করে হাতে পেয়েছিলাম কৌটোভরা নারকেল নাড়ু, সেই অনুভূতি কখনও ভুলব না '


লাভের অঙ্ক কমেছে
রমানাথ মজুমদার স্ট্রিটে নারায়ণ পেপার হাউসের ম্যানেজার মিন্টু সরকার জানালেন, আগে পয়লা বৈশাখের সময় প্রতি ঘন্টার যত টাকার লেনদেন হত, এখন সারাদিনেও হয় না এমনটা। লাভের অঙ্ক কমেছে। কমে গিয়েছে সাপ্লাইও। কোভিডকালে কাজ ছেড়ে গিয়েছেন পেপারমিলের অনেক শ্রমিক। হালখাতায় যে ধরনের পাতা ব্যবহার করা হয়, তা কিন্তু অন্যরকম। তাই এই কাগজ যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করতে পারছে না কারখানা। 
মুদিয়ালি থেকে আসা স্টেশনারি দোকানের মালিক জানালেন, বরাবর কলেজস্ট্রিটেই আসেন জিনিসপত্র কিনতে। আর হালখাতাটাও এখান থেকেই কিনে নিয়ে যান তিনি। জানালেন, আগে অনেক ধূমধাম করে করতেন নববর্ষের অনুষ্ঠান। এখন সেই জৌলুস আর নেই। তবে নিয়ম আছে, তাই মানতে হালখাতা পুজো করবেনই। 

কোভিডকালে যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে সঙ্গীতজগৎ
বাগুইআটিতে মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যবসায়ী যেন কোনও আর কোনও আশাই দেখতে পাচ্ছেন না দিন ভাল হওয়ার। কোভিডকালে যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে সঙ্গীতজগৎ, তাতে গানবাজনার সরঞ্জামের চাহিদাও তলানিতে ঠেকেছে। তাই হালখাতা খুললেও, নববর্ষের পুজো করলেও, আজকাল আর ক্রেতাদের আপ্যায়ণ করতে পারেন না দোকানে, গলায় ঝরে পড়ল আক্ষেপ। 
কলেজস্ট্রিট সংলগ্ন বাজারে হালখাতার কাগজের দাম বাড়ায় খাতার দামও বেড়ে গিয়েছে। আগে যেখানে কেজি প্রতি ৬০ টাকা ছিল, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৮০-১০০ টাকা। যত ভাল কাগজ, দাম তত বেশি। 
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাইকারি বাজারে প্রতি ক্যালেন্ডার ১০ টাকা করে পড়ত, এখন সেটা পড়ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।  টেবিল ক্যালেন্ডারের দামও আগের থেকে বেশ বেশি । 
কোভিড ধাক্কা কাটিয়ে কলেজস্ট্রিটে এবার নিয়ম মেনে কলেজ স্ট্রিটে কবি-সাহিত্যিকদে  নববর্ষের জমায়েত হচ্ছে ট্র্যাডিশন মেনেই। জানালেন দে'জ পাবলিশিং-এর সুধাংশুশেখর দে।