আশাবুল হোসেন, দীপক ঘোষ ও ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর থেকেই ভবানীপুরের উপনির্বাচন ঘিরে ক্রমশ চড়ছে পারদ। এই কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে দু’দলই নিজেদের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে ফেলেছে। এই কেন্দ্রে তরুণ এক আইনজীবীকে প্রার্থী করেছে সিপিএম।


তৃণমূলনেত্রী ও ভবানীপুরের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কি জিততে হবে তো? খেলা হবে তো? যাঁরা ষড়যন্ত্র করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে তো?' উলটো বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'হাইভোল্টেজ ফাইট হবে। অর্জুন সিংহকে অবজার্ভার করা হয়েছে, নিশ্চই ভাল হয়েছে। তাই যাতে না আসতে পারে তাঁর জন্য ওর বাড়িতে বোমা পড়ছে।'


ভবানীপুরে উপনির্বাচনের দামামা বেজে গেছে! বুধবার কর্মিসভার মধ্যে দিয়ে প্রচারে নামলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত বিজেপিও। উপনির্বাচনে জিততে নিজের নিজের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছে দু’দলই! একদিকে হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের মাঠে নামাচ্ছে তৃণমূল। অন্যদিকে, ভবানীপুরে ইলেকশন ম্যানেজমেন্টের জন্য বিধায়কদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি। কলকাতা পুরসভার আটটি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র। গত নির্বাচনে তার মধ্যে ৬টিতেই এগিয়েছিল তৃণমূল। বাকি দুটিতে লিড পায় বিজেপি।  সার্বিক ফলে বিজেপির রুদ্রনীল ঘোষকে ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটে হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।


এর মধ্যে ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়েছিল সবচেয়ে বেশি ভোটে। আবার ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে লিড ছিল বিজেপির। উপনির্বাচনে সেই দুটি ওয়ার্ড (৭৭, ৭৪)-সহ ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ও ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিধানসভা ভোটে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে ২ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এবার এই ওয়ার্ডের দায়িত্বে রাখা হয়েছে রাসবিহারীর বিধায়ক ও কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমারকে। 


পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব। ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে দিদিকে জেতানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভবানীপুর কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ২৮৮টি।  বিধানসভা ভোটে এর মধ্যে ১৮৯টিতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বাকি ৯৮টি ওয়ার্ডে শাসকদলকে পিছনে ফেলেছিল বিজেপি। ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুরের উপনির্বাচনে তৃণমূলকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলতে পরিকল্পনা করেছে বিজেপিও। 


সূত্রের খবর, বিধানসভা কেন্দ্রের আটটি ওয়ার্ডে ইলেকশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে এক-একজন বিধায়কদের।  আর গোটা বিষয়টি পরিচালনা করতে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহকে দলের তরফে ভবানীপুরের অবজারভার করা হয়েছে। এমনকি পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকেও এই উপনির্বাচনে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে কাজে লাগানো হবে বলেও সূত্রের খবর। এদিকে কংগ্রেস ভবানীপুরে প্রার্থী না দেওয়ায়, আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাসকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে সিপিএম। সব মিলিয়ে এবার ত্রিমুখী লড়াই ভবানীপুরে।