কলকাতা: পুলিশের অনুমতি না মিললেও ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ পুরসভা অভিযানে অনড় বিজেপি।
দলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, দুপুর ১টায় হিন্দ সিনেমার সামনে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হবে বিক্ষোভ মিছিল। দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, সৌমিত্র খাঁ, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ দলের নেতা-নেত্রীদের উপস্থিত থাকার কথা।
এদিন বিজেপি রাজ্য় সভাপতি জানিয়েছেন, বিরোধীদের কাজ হচ্ছে মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরা। সরকার যদি অনুচিত কাজ করে তাহলে সেটাকে দেখানো সরকারকে সচেতন করা। ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতি চলছে তার বিরুদ্ধে মানুষ সমস্যায় পড়ছে মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরতে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে।
করোনাকালে পুরসভা অভিযানের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। জমায়েত করলে মহামারী আইনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের নতুন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পুরসভার বাইরে বিজেপিকে বিক্ষোভ ও জমায়েত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরও জমায়েত করলে মহামারী আইনে পদক্ষেপ করা হবে। সেকথা বিজেপি নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রে দাবি।
পুরসভা অভিযানে পুলিশি অনুমতি না মেলা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, পুলিশকে অবগত করা হয়েছে যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে। বাধা দিলে তখন দেখা যাবে। বিজেপি রাজ্য সভাপতির হুঁশিয়ারি, যদি পুলিশ বাড়াবাড়ি করতে চায়, যদি চায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হোক, তাহলে তার পরিণাম তারা ভুগবে।
বিধানসভা ভোটে হারের পর এটাই বিজেপির প্রথম বড় কোনও কর্মসূচি, যা নিয়ে ফের একবার তুঙ্গে উঠছে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর।
ভুয়ো আইএএস অফিসার থেকে শুরু করে পুরসভার জয়েন্ট কমিশনারের মিথ্যা পরিচয় দেওয়া, পুরসভার অনুষ্ঠানকে নকল করে ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন থেকে শুরু করে বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি ট্যুইট করা -- ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের কীর্তিকলাপের শেষ নেই।
কিন্তু পুরসভাকে এড়িয়ে এসব কীভাবে সম্ভব হল, প্রথম থেকেই এই প্রশ্ন তুলে রাজ্য প্রশাসন ও শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি। প্রতিবাদে সোমবার কলকাতা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ।
যদিও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে আসতে রাজি নয় বিজেপি। গতকালই দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কর্মসূচি হবেই। তিনি বলেন, মানুষের হয়ে পাশে থাকব, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করব।
পাল্টা রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কটাক্ষ,আজ রাজ্যে তাদের লোক ২০০ আসন পায়নি বলে, বিরোধী বেঞ্চে বসতে হচ্ছে বলে এইসব করছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
পুরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ওরা কোনও মহামারি আটকাতে রাস্তায় নামল না, আর মহামারীর সময় রাস্তায় নামছে। পুলিশকে বলব কড়া পদক্ষেপ করতে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিজেপির পুর-অভিযান ঠেকাতে মোতায়েন থাকবে এক হাজার পুলিশকর্মী। নেতৃত্বে থাকবেন একজন অ্যাডিশনাল কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার, দু’জন জয়েন্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার এবং আট জন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। তৈরি রাখা হবে কুইক রেসপন্স টিম, এইচআরএফএস ও জল কামান।
সূত্রের খবর, প্রথমে রানি রাসমণি স্কোয়ারে জমায়েত করার কথা বিজেপির নেতা কর্মীদের। সেখান থেকে মিছিল করে যাওয়ার কথা কলকাতা পুরসভার দিকে। তাই দুই জায়গাতেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রানি রাসমণি স্কোয়ারে দায়িত্বে থাকবেন একজন যুগ্ম-কমিশনার, দু’জন অতিরিক্ত কমিশনার, তিনজন ডেপুটি কমিশনার।
প্রস্তুত রাখা হবে জলকামান। অন্যদিকে পুরসভার দিকে দায়িত্বে থাকবেন দু’জন যুগ্ম-কমিশনার, একজন অতিরিক্ত কমিশনার, ৮ জন ডেপুটি কমিশনার।