কলকাতা: করোনা রোগীদের অধিকাংশকেই হাসপাতালে ভর্তি করে প্রথমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিউমিডিফায়ার নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে, সেখান থেকেই ছড়াতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এনিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এরাজ্যের বাসিন্দা, পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলার। করোনামুক্ত হওয়ার পর তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব রোগীর দীর্ঘদিন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা হয়েছে, বা দীর্ঘদিন নলের মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হয়েছে, তাঁদের শরীরের এই জাতীয় সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে এই অসুখ ছড়াচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিউমিডিফায়ার থেকেই।
অক্সিজেন সিলিন্ডারের সঙ্গে একটি পাত্রে ডিস্টিলড ওয়াটার থাকে। যার মধ্যে দিয়ে অক্সিজেন যায়। এটিকেই হিউমিডিফায়ার বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে, হিউমিডিফায়ার নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে সেখানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জীবাণু জন্ম নেয়। তারপর তা রোগীর শরীরে ঢুকে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
সিসিউ বিশেষজ্ঞ সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হিউমিডিফায়ার থেকে হতে পারে। সব জায়গা পরিষ্কার থাকলে কোনও সমস্যা হবে না। হিউমিডিফায়ারে ডিস্টিলড ওয়াটার থাকে। এটাকে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। যাতে ভাল থাকে।
এখন অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, হিউমিডিফায়ারের ব্যবহার তো বহু পুরনো। তাহলে এই রোগ এল কোথা থেকে? সন্দীপ চক্রবর্তীর মতে, আগে সাধারণত, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল ছিল। ইমিউনিটিতে ভাইরাস, ফাঙ্গাস আটকে দিত। এখন ইমিউনিটি দুর্বল। এখন করোনা রোগীদের স্টেরয়েড দেওয়া হয়। ডায়াবিটিস বাড়ে। ইমিউনিটি কমে। ইমিউনিটি কমে গেলে অ্যাটাক করছে।
এই কারণেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিউমিডিফায়ার নিয়মিত পরিষ্কার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তেমনই এক চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, এখন থেকে নজরে রাখতে হবে। অক্সিজেনের ফ্লো মিটার, ডিস্টিল্ড ওয়াটার পরিষ্কার করা।
কিন্তু, এই রোগ হলে তাঁর চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব? চিকিৎসক অংশুমান মুখোপাধ্যায় বলেন, স্টেরয়েডে সতর্ক থাকা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। চিকিৎসক কাজলকৃষ্ণ বণিক জানিয়ে রাখবলেন, মিউকরমাইকোসিস চিকিৎসার খুব বেশি একটা ওষুধ নেই।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুরসভা। করোনা-মহামারীর মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যাতে না ছড়ায়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। চিকিৎসক তথা কলকাতা পুরসভার কোভিড উপদেষ্টা শান্তনু সেন বলেন, শুনেছি ৫টা কেস হয়েছে। অন্যান্য জায়গায় হচ্ছে। নজরে রাখছি আমরা।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, উপদেষ্টার নির্দেশ মতো সতর্ক থাকছি। এরকম কেস নজরে এলে বিষয়টা নিয়ে রাজ্য সরকারকে ইনফর্ম করব।
মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই দেড় হাজারের বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। ৯০ জনের মৃত্যুও হয়েছে এই রোগে। রাজস্থান এবং তেলঙ্গানা ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি হিসাবে ঘোষণা করেছে।
এবার কেন্দ্রও এই অসুখকে মহামারী ঘোষণা করল। ফলে করোনার মধ্যে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ আরও বাড়ছে।