কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ পৌঁছেছে আদালতে। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (CBI)। সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চের মধ্যে তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। তার মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সেই নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দিলেন, মেধা, স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার নিরিখেই আগামী দিনে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সংযোগ এবং প্রভাব কোনও ভাবে থাকবে না বলেও আশ্বস্ত করলেন তিনি।
নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ SSC-র
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সহকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে SSC। কর্ম এবং শারীরশিক্ষাতেও অতিরিক্ত পদ তৈরির কথা জানিয়েছে রাজ্য। একই সঙ্গে শীঘ্রই প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হতে চলেছে। তা নিয়ে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের পর নবান্ন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ব্রাত্য। সেখানে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ উঠলে ব্রাত্য জানিয়ে দেন, যেখানে তিনি ছিলেনই না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্যও করবেন না। তার পরেই সংযোগ করেন, "আগামী দিনে যে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তাতে ভুলচুক হলে সংশোধন করা হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতাকেই অগ্রাধিকার দেবে সরকার। সেখানে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক থাকবে না।"
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার দায় আগেও ঝেড়ে ফেলতে দেখা গিয়েছিল ব্রাত্যকে। সেই সময় তাঁর পাশে দাঁড়ান তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। জানিয়ে দেন, ব্রাত্যর আমলে এমন কিছু ঘটেনি। তাহলে কি প্রকারান্তরে রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলেি দুর্নীতি ঘটেছিল! কুণালের বক্তব্য ছিল, "এই উত্তর শুধুমাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই দিতে পারেন, যিনি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।"
রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য কি তাহলে সেই অনিয়মের অভিযোগে কোনও তদন্ত কমিটি বসাবেন? সেই সম্ভাবনাও বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেন ব্রাত্য। জানান, বিষয়টি মহামান্য আদালতে পৌঁছেছে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তিনি আলাদা করে এ সবের মধ্যে যাবেন না।
বিগত ১৪ মাস ধরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন SSC’র নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীরা। কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীরা মাসখানেক ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন শহিদ মিনার চত্বরে। এই পরিস্থিতিতে, তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন একদিকে যেমন পুরনো নিয়োগের জট কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হল, তেমনই নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তও নিল রাজ্য সরকার।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ব্রাত্য জানিয়েছেন, SSC-র নতুন পদ ৫ হাজার ২৬১টি। কর্মশিক্ষার জন্য ৭৫০ এবং শারীরশিক্ষার জন্য ৮৫০টি পদ তৈরি করা হয়েছে। আপাতত ১৬০০ পদ তৈরি করা হয়েছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি বুঝে আরও চিন্তাভাবনা হবে। আন্দোলন হোক বা না হোক, মানুষের যদি ন্যায্য দাবি থাকে, তা পূরণে মুখ্যমন্ত্রী সবসময়ই তৎপর বলেও মন্তব্য করেন ব্রাত্য। সব শূন্যপদ বিবেচনা করে আগামী দিনে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী পদে নিয়োগে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়বে বলেও জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই
তবে কীভাবে, কত তারিখের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে? পরীক্ষা ফি কত হবে? লিখিত পরীক্ষা কবে হবে এবং কীভাবে হবে? তা বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। ২০১৬ সালে, শেষবার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল। ৫ বছর আগে হয়েছিল প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। সেই নিয়োগেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। শিক্ষক নিয়োগের ৩টি মামলায় CBI তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গপাধ্যায়। পরে, সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলাগুলি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে।