দীপক ঘোষ, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা:  সীমান্ত সন্ত্রাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ লাগোয়া ৩ রাজ্য-- পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও পঞ্জাবে বিএসএফ-এর কর্মক্ষেত্রের পরিসর বাড়িয়েছে কেন্দ্র।


সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভিতর অবধি এলাকায় তল্লাশি, কিছু বাজেয়াপ্ত করা ও গ্রেফতারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বিএসএফকে। অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওই ৩ রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৫০ কিলোমিটার ভিতর অবধি এলাকায়, তল্লাশি, অবৈধ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত ও গ্রেফতার করতে পারবে বিএসএফ।


এই বিষয়টি নিয়েই এখন মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। বিএসএফ প্রাক্তন ডিআইজি সমীর মিত্র বলেন, এটা পলিটিক্যাল মোটিভেটেড কী না, দেখতে হবে। বিএসএফ-এর ম্যানুয়েল অনুযায়ী, কোনও রাজ্যে বিএসএফ-এর পরিসর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আলোচনা বাঞ্ছনীয়। বিএসএফের তদন্তের ক্ষমতা নেই পুলিশের আছে। বিএসএফ গ্রেফতার করলেও, পুলিশের হাতে তুলে দিতে হয়। ফলে, এক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে। 


পশ্চিমবঙ্গ সহ তিন রাজ্যে বিএসএফের অধিকার ক্ষেত্রের সীমা বাড়ল, কড়া আপত্তি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর


এই সিদ্ধান্তকে রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যেভাবে বিএসএফ-এর কর্মক্ষেত্র, সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটারের বদলে, বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করল, তা প্রতিবাদযোগ্য। এটা রাজ্যের অধিকারভুক্ত এলাকায় পিছনের দরজা দিয়ে নাক গলানো।


কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কংগ্রেস শাসিত পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চান্নি ট্যুইট করে বলেছেন, বিএসএফকে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র যে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।


বিরোধীদের পাল্টা যুক্তি দিয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত কোনও বিষয় হলে, বিএসএফকে দোষ দেওয়া হয়, বিএসএফ কর্মতৎপরতা বাড়ালেও দোষ দেওয়া হবে, সীমান্তবর্তী এলাকায় ডেমোগ্র্যাফি চেঞ্জ হচ্ছে, অশান্তি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, তাই জেনেবুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।


বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বিএসএফ-এর ক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, এই সিদ্ধান্তের ফলে সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশে লাগাম টানা সম্ভব হবে।


বিএসএফ-এর কর্মক্ষেত্রের পরিসর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বের ৫ রাজ্য-- তথা নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মণিপুর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে নির্দিষ্ট পরিসর বেঁধে দেওয়া হয়নি।


গুজরাতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটার অবধি এলাকা ছিল বিএসএফ-এর আওতায়। তার পরিসর কমিয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে।