কলকাতা: কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট না থাকায় ভর্তি নিল না কোনও হাসপাতাল।  দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলল না অক্সিজেন। 


যাদবপুরের গড়ফা থানা এলাকায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল করোনা আক্রান্তের। মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর এল করোনা পরীক্ষার পজিটিভ রিপোর্ট। 


গতকাল রাত ৮টা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে, অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যু হয় ৭৭ বছর বয়সী সন্ধ্যারানি পালের।  মৃত্যুর পরও দুর্ভোগ পরিবারের।  ১৪ ঘণ্টা ঘরে পড়ে মৃতদেহ।  নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই।


মৃতার পরিবারের আরও তিন সদস্য করোনায় আক্রান্ত বলে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ২ জন হাসপাতালে ভর্তি। একজন বাড়িতে আইসোলেশনে। 


মৃতার পরিবারের এক সদস্য জানান, বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরলেও, কোথাও সিট মেলেনি। স্বাস্থ্যভবনে ফোন করেও  কোনও সুরাহা হয়নি। দাবি, সেখান থেকে বলা হয়, টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ নিয়ে আসলে তখন ব্যবস্থা করা যাবে।


ওই সদস্য আরও জানান, বহু দোকান ঘুরে শেষে এক জায়গা থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যায়। কিন্তু, তা বাড়ি এনে কাজে লাগানোর আগেই বৃদ্ধা মারা যান। 


মৃতার এক ছেলে বলেন, সিলিন্ডার এনে নব খুলে লাগানোর সময়টুকুও পেলাম না। মা তার আগেই চলে গেল। 


তিনি আরও জানান, বৃদ্ধা মারা যান রাত ৮টা নাগাদ। করোনা রিপোর্ট আসে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ। তাতে দেখা যায়, বৃদ্ধা কোভিড পজিটিভ ছিলেন।


বৃদ্ধার ঘরে এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি। মুখ থুবড়ে বিছানায় পড়ে মৃতার দেহ। অক্সিজেনের সিলিন্ডারের নব খোলা। মুখে লাগানো।


করোনায় মৃত রোগীর দেহ পড়ে রয়েছে ১৪ ঘণ্টা। দেহে পচন ধরেছে। পুরসভার তরফে দেহ নিয়ে যাওয়ার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। 


তাঁরা জানান, পুরসভা থেকে দেহ নিয়ে যাওয়ার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কী করণীয় কিছুই তাঁরা জানেন না। এমনকী, স্যানিটাইজেশনের কোনও উদ্যোগ নেই বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।


এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। 


প্রতিবেশীরা বাড়ির দরজা জানলা বন্ধ করে রয়েছেন। সকলেই চাইছেন অবিলম্বে সুরাহা হোক।


চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, যে ক্রাইটেরিয়ায় চিকিৎসা হচ্ছে, তাতে আরও মৃত্যু হতে পারে। অক্সিজেনের জোগান হাতের বাইরে। রিপোর্ট ১৪-১৬ ঘণ্টা লাগবে। 


এই পরিস্থিতিতে যত দ্রুত টেস্ট করানো যাবে, তত ভালো। তিনি বলেন, দ্রুত টেস্ট করাতে হবে। জ্বর আসলেই টেস্ট। উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে পরীক্ষা করাতে হবে।