কলকাতা : ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্তি করে নির্ধারিত দিনে টিকা নিতে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও মেলেনি কোভিডের টিকা। কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে পেয়ে গিয়েছিলেন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সার্টিফিকেট! হাসপাতালে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হয়েছিলেন পাঁচ প্রবীণ। যদিও তার ঠিক দু'দিনের মধ্যেই ভুল শুধরে জোকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কোভিডের ভ্যাকসিন দিল হাসপাতাল। সৌজন্যে এবিপি আনন্দ।
ঠিকা নিয়ে ফিরে গৃহকর্তী মঞ্জুলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'এবিপি আনন্দে খবর সম্প্রচার হওয়ার পর থেকেই দফায় দফায় ফোন আসতে শুরু করে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য দফতর থেকে। পরের দিন যাওয়ার পরও ভীষণ ভাল ব্যবহার পেয়েছি। ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই টিকা নিয়ে ফিরে এসেছি।' পরিবারের আর এক সদস্য দিলীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কথায়, 'বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অসহায় বোধ করছিলাম, চিন্তা হচ্ছিল। এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি।'
ঠিক কী হয়েছিল গোটা ঘটনাক্রম?
গত ১৯ এপ্রিল, সোমবার কো-উইন অ্যাপের মাধ্যমে করোনা টিকা নেওয়ার জন্য জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিল জোকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। এরপর নিয়মমাফিক বিষ্ণপুর ব্লক ২-এর সামালী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, ২০ এপ্রিল সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে করোনার টিকা পাবেন পরিবারের পাঁচ সদস্য। সেই মতো সমস্ত নথি নিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছে যায় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।
হয়রানির শুরু হয় এরপরেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ওই পরিবারকে জানানো হয়, 'আপাতত ভ্যাকসিনের যে ক'টি ভাইল রয়েছে তা দ্বিতীয় ডোজের গ্রাহকরাই পাবেন, পরে সম্ভব হলে তবেই ওই পাঁচ সদস্যকে টিকা দেওয়া হবে।' কর্তৃপক্ষের কথা মতো দীর্ঘক্ষণ হাসপাতাল চত্বরে অপেক্ষা করেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে হয় ওই ৫ প্রবীনকে। পরে আরও একবার হাসপাতালে গেলে আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। জানানো হয়, 'উপর-মহল' থেকে ওই পাঁচ সদস্যের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা নেই।
ভ্যাকসিন না মেলার ঝক্কির সঙ্গে তারপর আবার যুক্ত হয় নতুন সমস্যা। বাড়ি ফিরে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের লোকেরা স্বাস্থ্য দফতরের পোর্টালে দেখেন, ইতিমধ্যেই তাঁদের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্য আপডেট হয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিন না পেয়েই প্রথম দফার ডোজ পাওয়া হয়ে গিয়েছে উল্লেখ করে সার্টিফিকেটও ইস্যু করা হয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পাঁচ জনের নামে। উল্লেখ করা হয়েছে দ্বিতীয় দফার ডোজের দিনক্ষণও। এহেন অসহায় অবস্থায় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এবিপি আনন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
গত ২১ এপ্রিল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের যাবতীয় ভ্যাকসিন সংক্রান্ত হয়রানির খবর সম্প্রচারের হতেই তড়িঘড়ি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও। ২২ এপ্রিল অর্থাৎ গতকাল কার্যত দায়িত্ব নিয়ে ওই পরিবারের ৫ জনকে প্রথম দফার টিকা দেওয়া হয়েছে। আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।
আপাতত দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পেলেও শুরুতে দীর্ঘ এই হয়রানির কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুষছেন জোকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।